ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘স্যার জুতা কি পালিশ করে দেব’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
‘স্যার জুতা কি পালিশ করে দেব’ জুতা কালি করছে মিলন-ছবি: জি এম মজিবুর 

ঢাকা: মিলন প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই বাক্স হাতে চলে আসে গাবতলী টার্মিনালে। টার্মিনালে ঘুরে ঘুরে সে অন্যের জুতা, স্যান্ডেল সেলাই করে, কালি করে। এর বিনিময়ে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার। 

তার বয়স এখন ১২ চলে। এ বয়সে পড়াশোনা করার কথা তার।

কিন্তু একমাত্র বোনকে বিয়ে দিতে যেয়ে বাবা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঋণের টাকা জোগাড় করতে তিন বছর আগে বাবা-মার সঙ্গে ঢাকা চলে আসে মিলন। কাজ শুরু করে জুতা-স্যান্ডেল সেলাইয়ের। পড়াশোনা তখনই বন্ধ হয়ে যায়। এখন থাকে কল্যাণপুর খালেক কাউন্টারের পেছনে ভাড়া বাসায়।

সে জানায়, জুতা সেলাই, কালি করে প্রতিদিন তার ১শ’ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়ে সংসার চলে। আর তার বাবা রাস্তায় লেবারের কাজ করেন। প্রতিদিন তাকে চেয়ে থাকতে হয় জুতার দিকে। কারও ময়লা পড়া জুতা বা ছেড়া জুতা দেখলেই ছুটে এসে বলে 'স্যার জুতা কি পালিশ করে দেব'।

সম্মতি দিলেই কেবল কাজ নেয় সে। মিলন জানায়, কেউ বকা দিলে কষ্ট হয়। তবুও হাসিমুখে আবার অন্যের কাছে ছুটে যায় সে কাজ পাওয়ার আশায়। হাসিমুখে মিলন বলে, আমরা এখন সুখে থাকি। আমার বোনের বিয়ে দিয়েছি, সে সুখে আছে। তার একটা ছেলে হয়েছে।

পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলন বলে, পড়াশোনার ইচ্ছা তো আছেই। আমি যখন ঢাকায় আসি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। এখনও ক্লাসের বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। পড়তে ইচ্ছা করে কিন্তু...।

মিলন বলে, আমাদের আরও কিছু ঋণ আছে। এগুলো পরিশোধ হলে হয়তো অন্য কাজ করবো। পড়াশোনা তো আর চাইলেই হবে না। তাই ইচ্ছা আছে একটা সেলুনের দোকান দেওয়া। এখন যে কাজ করছি এতে অনেকেই ঝাড়ি মেরে কথা বলে। সেলুন দিলে সেটা হয়তো পারবে না।

গাবতলীতে কোনো সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে হাসিমুখে বলে, আমাদের আর কি সমস্যা হবে। আমরা তো কারও ক্ষতি করি না। তবে ভিআইপি আসলে মাঝে মাঝে সমস্যা করে। আমাদের তখন কাজ করতে দেয় না। তখন খালি হাতেই বাসায় ফিরতে হয়। এছাড়া কোনো সমস্যা নেই।

তার স্বপ্ন এখনও সুযোগ পেলে পড়াশোনা করবে, বড় অফিসার হয়ে নিজ গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করবে। গ্রামে তাদের যে ৫ শতক জমি আছে সেখানে একটা বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখে মিলন।  

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
ইএআর/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।