বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) দুপুরে নিহতের পরিবারের সদস্য ও তার স্বজনরা এ অভিযোগ করেছেন।
নিহত সুমন জাহিদের ভায়রা বুলবুল বাংলানিউজকে বলেন, তাকে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর বলেন, রাজাকার গোলাম আজমের বিরুদ্ধে যখন গণআন্দোলন গড়ে ওঠে তখনকার গণআদালতের অন্যতম সাক্ষী সুমন জাহিদ। বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলারও সাক্ষী ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন>>
** ট্রেনে কাটা পড়ে সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলের মৃত্যু
জানা যায়, ১৯৭১ সালে আট বছর বয়েসী সুমন জাহিদের সামনে থেকে তার মা সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে পাকিস্তানের দোসর আল বদররা ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এরপর শুরু হয় তখনকার শিশু সুমন জাহিদের সংগ্রামী জীবন। স্কুটার চালিয়ে লেখাপড়া করেছেন তিনি।
স্বজনরা বলেন, সুমন জাহিদ অত্যন্ত সাবধানী একজন মানুষ ছিলেন। আত্মহত্যা করার প্রশ্নই ওঠে না। বাসা থেকে বের হলে মোটরসাইকেল নিয়েই বের হতেন তিনি। বৃহস্পতিবার কেন তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে বের হননি-তা এখনও বোধগম্য নয়।
তৌহিদ রেজা নূর বলেন, ট্রেনে কাটা পড়লে শরীর থেকে মাথা এতো সুন্দরভাবে বিচ্ছিন্ন হয় না, গলা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যেতো। যখন মাথাটিকে শরীরের সঙ্গে লাগানো হয়েছে তখন স্পষ্ট বোঝা গেছে কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে।
‘কয়েকদিন আগে বিশাকা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে খুন করা হয়েছে, এর আগে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাইকে হত্যা করা হয়। আমি বিশ্বাস করি স্বাধীনতা বিরোধী কোনো চক্র আবার জেগে উঠেছে, তাদের হাতে সুমন জাহিদ খুন হয়েছে। ’
কারা কীভাবে এবং কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তৌহিদ রেজা নূর।
এর আগে সকালে খিলগাঁও বাগিচা রেল গেট সংলগ্ন রেললাইনের পাশ থেকে সুমন জাহিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রেলওয়ে পুলিশ বলছে, ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, নিহতের শরীর, মাথা পিট ও মুখে আঘাত রয়েছে। শরীর থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন।
‘বিচ্ছিন্ন স্থানটি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনের চাকা উপর দিয়ে গিয়ে তার মাথাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবু আমরা ভিসেরা সংগ্রহ করেছি, এর প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে। ’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মৃত্যুর আগে উনাকে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি-না তা জানতেই ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে।
নিহত সুমন জাহিদ বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকের শান্তিনগর শাখায় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার দুই ছেলে রয়েছে। স্ত্রী-ছেলেদের নিয়ে উত্তর শাহজাহানপুরের বাসায় থাকতেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
পিএম/এজেডেএস/এমএ