ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদের বাঁধভাঙা আনন্দে বিবর্ণ হচ্ছে পথের দুর্ভোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
ঈদের বাঁধভাঙা আনন্দে বিবর্ণ হচ্ছে পথের দুর্ভোগ গ্রামমুখী মানুষের ঢল রেলস্টেশনে। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: ঈদের আর মাত্র ক’দিন বাকি। সময় যেন একদমই নেই! হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে তাই শিকড়ের টানে ঘরে ছুটছে মানুষ। ফলে রাজধানী ছেড়ে জনস্রোত এখন শহর ও গ্রামমুখী।

নারী, পুরুষ বা শিশু সাবারই লক্ষ্য স্বজনদের উষ্ণ সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন। যানবাহনে জীবনের ঝুঁকি, পথের ভোগান্তি কোনো কিছুই আর আটকাতে পারছে না ঘরমুখী এই মানুষের।

ট্রেন বা বাসের ছাদে, দরজা-জানালায় বাদুরঝোলা হয়ে ঝুলেও আপনজনের কাছে ফিরছে মানুষ। মা-বাবা, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের বাঁধভাঙা আনন্দ উপভোগ করতে হাসি মুখে সইছে পথের হাজারো যাতনা। খুশির এই দিনটিকে ঘিরে কিছু সময়ের জন্য হলেও ইট-পাথরের শৃঙ্খলে আবদ্ধ শহুরে জীবনটার ছুটি হয়েছে। ব্যস্ততার লাগাম টেনে মানুষ গ্রামে আসছেন আরও বেশি পরিতৃপ্তির আশায়। গ্রামমুখী মানুষের ঢল রেলস্টেশনে।  ছবি: বাংলানিউজঈদুল ফিতর উপলক্ষে বৃহস্পতিবারই (১৪ জুন) শেষ কর্মদিবস। তাই শেষ মুহূর্তে রেলও ও সড়ক পথে বাড়ি ফিরছেন বিপুল সংখ্যক ঘরমুখী মানুষ। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঈদ করতে রাজশাহী ফিরছেন তারা। তাই সকাল থেকেই জন সমাগম বেড়েছে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে।

স্টেশনের বাইরে যানবাহনের বাড়তি জটলা ক্ষণে ক্ষণে জানান দিচ্ছে ট্রেন আসছে। আসছে হাজারো যাত্রী। তাই ঈদ উপলক্ষে রেল যাত্রীদের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে স্টেশন চত্বরেও। বর্তমানে রেল ভ্রমণের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরায়।

জিআরপি পুলিশের টহলের পাশাপাশি কাজ করছে রেলের নিরাপত্তাকর্মীরাও। কাউকে সন্দেহ হলেই চালানো হচ্ছে তল্লাশি। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিজিবি ও এলিট ফোর্স র‌্যাব। এছাড়া যাত্রীদের হয়রানি এড়াতে স্টেশনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্ববধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থাপন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার  দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় মাত্র রাজধানী থেকে আসা সরকারি কর্মচারী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, পথে কষ্টের সীমা নেই। আগাম টিকিট কাটার পরও নির্ধারিত আসনে বসে পরিবারে নিয়ে রাজশাহী আসতে পারেননি। ভোরে কমলাপুর স্টেশনের আসার পর তিনি দেখতে পারেন পুরো ট্রেনই মানুষে ঠাসা। কোথাও যেন তিল ধারণেরও ঠাঁই নেই।

এরপর জানালা দিয়ে অনেক কষ্টে স্ত্রী, সন্তানকে ভেতরে ঢুকিয়েছেন। তিনি এসেছে দরজায় দাঁড়িয়ে। যেই বগির টিকিট ছিল মানুয়ের চাপে সেখানে পৌঁছাতেই পারেননি। যেখানে উঠেছেন। সেখানেই দাঁড়িয়ে বসে পথটা পাড়ি দিয়ে এসেছেন। অনেক কষ্ট হলেও সময় মতো রাজশাহী ফিরতে পেরেছেন।

তবে পথের এতো ভোগান্তির পরও প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে মাথার ঘাম মুছতে মুছতে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে ঈদ উপদযাপনের যেই আনন্দ, তার কাছে পথের এই কষ্ট কিছুই না’।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সুপারিনটেনডেন্ট গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী-ঢাকা রুটে এবারও ঈদ স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়া ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ সামলাতে এরই মধ্যে বিভিন্ন রুটের ট্রেনে ২৮টি বাড়তি কোচ সংযোজন করা হয়েছে। তাই কিছুটা দুর্ভোগ কমেছে। বাড়তি চাপ থাকলেও রেলপথে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরাপদে মানুষ বাড়ি ফিরতে পারছেন।

তিনি জানান, এবার ঈদে পশ্চিম রেলের যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং ছাড়াও থাকছে বিশেষ টহল। রেল স্টেশনের নিরাপত্তায় রেল পুলিশ, জিআরপি পুলিশের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে থাকছেন বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরাও। টিকিট কালোবাজারি, প্রতারণা, যাত্রী হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে তারা কাজ করছেন। এছাড়া যাত্রাকালীন দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যবেক্ষণ চলছে রেলপথেও। বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোও।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার আগে থেকেই রেললাইন সংস্কার ও পর্যবেক্ষণ কাজ শেষ হয়েছে। তাই ঈদের বাড়তি চাপেও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। তবে ঈশ্বরদী-উল্লাপাড়া সেকশনের কৈডাঙ্গা ও শান্তাহার-জয়পুরহাট সেকশনের হলহলিয়া ব্রিজ দু’টি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সতর্ক রয়েছে কর্তৃপক্ষ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।