ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে বন্যার্তরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে বন্যার্তরা বন্যায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জনসাধারণ

মৌলভীবাজার: টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলে মনু ও ধলাই নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজারের তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছেন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।

জানা যায়, বন্যায় কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর, হাজিপুর, টিলাগাও ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের প্রায় ৬০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাজনগর উপজেলার কামারচাক, টেংরা ও মনসুর নগর ইউনিয়নের ৫০টির মতো গ্রাম।

এরমধ্যে কামারচাক ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর, মুন্সিবাজার ইউনিয়ন ও পৌরসভাধীন প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকাগুলোর মধ্যে শুধু কমলগঞ্জ উপজেলায় বুধবার (১৩ জুন) থেকে ত্রাণ তৎপরতা চলমান থাকলেও অন্য দুই উপজেলার পানিবন্দিরা এখনো কোন ত্রাণ পাননি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৩ জুন) বন্যা কবলিত মানুষের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ১১৫ টন চাল ও দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এরমধ্যে কমলগঞ্জে ৪৫ টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা, কুলাউড়াতে ৫০ টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা, রাজনগরে ১৫ টন চাল ও ২০ হাজার টাকা এবং শ্রীমঙ্গলে পাঁচ টন চাল ও ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

বরাদ্দ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কমলগঞ্জে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হক। ইউনএনও মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার (১৩ জুন) পাঁচ কেজি করে ১২৫ পরিবারকে চাল, ৪০০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আজও ১০০০ পরিবারকে চাল দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে যে বরাদ্দ এসেছে তা আমাদের হাতে এখনো পৌঁছায়নি। এ অবস্থায় আমরা বরাদ্দ অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন থেকে চাল ও শুকনো খাবার কিনে ত্রাণ দেয়া শুরু করেছি। মানুষজন চরম দুর্ভোগে আছেন তাই বসে না থেকে আমরা কাজ করছি।

সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, পানিবন্দি ও নদীভাঙন কবলিত এলাকার অধিকাংশ ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। এসকল এলাকার ফসলি মাঠ, টিউবওয়েল ও স্কুলেও পানি ঢুকে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। গো খাদ্যর সংকট। মালামাল ও গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। চরম খাদ্য সংকটে না খেয়ে আছেন বন্যাকবলিতরা।

গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার থেকে তাদের ত্রাণ দেয়া হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ তাদের দেখতে আসেনি। কামারচাক ইউনিয়নের সাফারুন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ২ দিন হলো আমরা পানিবন্দি। পরিবারের সাতজন সদস্য গরুবাছুর নিয়ে রাস্তায় আছি। রোজার মাসে কোনো ধরনের খাবার নেই আমাদের কাছে। এখনো সরকারি কোনো ত্রাণ হাতে পাইনি।

পানিবন্দি হয়ে অনেক পরিবার রাস্তা্য আশ্রায় নিয়েছে

রাজনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউনএনও) ফেরদৌসী আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে যে বরাদ্দের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা এখনো পাইনি। বুধবার পর্যন্ত এফেক্টেড অনুযায়ী ত্রাণ পর্যাপ্ত ছিল। বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে কোন ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছেনা। তবে বিকেলের মধ্যে আশা করছি ত্রাণ দিতে পারব।

কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, ইতিমধ্যে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। তবে বৃষ্টির জন্য বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছেনা হয়তো। আর জেলা প্রশাসন থেকে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা এখনো পাওয়া যায়নি। আমাদের হাতে পৌঁছানো মাত্রই বিতরণ শুরু করব।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) তোফায়েল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ১১৫ টন চাল ও নগদ দেড় লাখ টাকা ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) বিকেলের মধ্যে সেসব ত্রাণ এলাকাগুলোতে পৌঁছে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।