কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে শনিবার থেকে কক্সবাজার জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৯৪ মিলিমিটার।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজার একটি উপকূলীয় অঞ্চল। এই জেলার সব উপজেলায় রয়েছে অনেকগুলো নিম্নাঞ্চল। টানা বৃষ্টি হলে এগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া কক্সবাজার, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালীতে রয়েছে পাহাড়। তাই অতিবৃষ্টি এই জেলার জন্য অশনি সংকেত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবিরাম বর্ষণে প্রতিটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার তিনটি নদীই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বর্ষণ অব্যাহত থাকায় লোকালয়ে পানি ঢুকছে। প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, আলীর জাহাল, সিকদার পাড়া, হোটেল-মোটেল জোন, ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া, খরুলিয়া, দরগাহপাড়া, পোকখালীর মধ্যম পোকখালী, নাইক্ষংদিয়া, চৌফলদণ্ডী, নতুনমহাল, ঈদগাঁও বাজার এলাকা, কালিরছড়া, রামুর উপজেলার ধলিরছরা, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, উত্তর মিঠাছড়ি, পূর্ব ও পশ্চিম মেরংলোয়া, চাকমারকুল, কলঘর, লিংকরোড়।
চকরিয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের আমান চর, কাজির পাড়া, ২ নং ওয়ার্ডের জেলেপাড়া, হালকাকারা, মৌলভীরচর, ৩ নং ওয়ার্ডের তরছপাড়া, ৮ নং ওর্য়াডের নামার চিরিংগা, কোচ পাড়া, ৯ নং ওয়ার্ডের মৌলভীর কুমসহ অনেক স্থানে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
মালুমঘাট, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, ফুলছড়ি, ইসলামপুর ও পেকুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি থৈ থৈ করছে। অপরদিকে জোয়ারের পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি ভোগান্তি বাড়িয়েছে উপকূলবাসীর।
ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ভারী বর্ষণে বাঁশঘাটার কাঠের সাঁকোটি ঢলে ভেসে যায়। আর ভাঙনের কবলে পড়ে ঈদগাঁও-গোমাতলী সড়ককাম বাঁশঘাটা এলাকার নদীর বাঁধ। এতে বিচ্ছিন্ন রয়েছে সড়ক যোগাযোগ।
পোকখালীর ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ঢলের তীব্রতায় পশ্চিম পোকখালীর সাহেবানির চর এলাকার বেডিবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান হোছাইন ইব্রাহিম জানান, ভারী বর্ষণে মহেশখারী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বাংলানিউজকে বলেন, মানিকপুর উত্তরপাড়া ও সুরাজপুর দক্ষিণপাড়ায় প্রায় ১৮শ’ বাড়ি ঘরে ঢলের পানি ঢুকেছে। এসব পরিবারের লোকজনকে পাশের পাহাড়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, পানির প্রবাহ বাড়ায় ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঢলের কারণে চিংড়ি জোনের শত শত চিংড়ি প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে মাছ ভেসে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন হাজারো চাষি।
চকরিয়া উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মো. শিবলী নোমান বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলার বরইতলী ও কাকারা ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এভাবে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধস ও নদী ভাঙনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কক্সবাজার পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড় ধসে মৃত্যু ঝুঁকি এড়াতে পৌরসভার পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর তীরের কন্যারকুম, কইজ্যারদিয়া, পুরুত্যাখালী এলাকার বেড়িবাঁধের কিছু অংশ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে তা সম্ভব হবে না।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অতিবর্ষণে পাহাড় ধস বা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পাহাড়ে বসবসরতদের সরানো যাচ্ছে না। তারপরও আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসতে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৮
জেডএস