ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যৌন হয়রানি রোধে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৮
যৌন হয়রানি রোধে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য মতবিনিময় সভায় বক্তারা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: বর্তমানে নারী ও শিশুর প্রতি সবক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

শনিবার (৯ জুন) ডেইলি স্টার ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘সকলক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য খসড়া আইন, ২০১৮’ (প্রস্তাবিত) শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ মত দেন।
 
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর যৌথ উদ্যোগে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স-এর সহায়তায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।


 
সভায় বলা হয়, ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র দায়ের করা এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের লক্ষ্যে এক যুগান্তকারী রায় দেন। ইতোমধ্যে প্রায় এক দশক অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে নারী ও শিশুর প্রতি সর্বক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে। সর্বক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
 
‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১৮’ শীর্ষক প্রস্তাবিত একটি খসড়া আইন উপস্থাপন করেন ‘বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র পরিচালক তৌহিদা খন্দকার। এর ওপর আলোচনায় অংশ নেন নিম্ন আদালতের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর, আইনজীবী এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
 
সভা সঞ্চালনা করেন ‘সুজন’ সম্পাদক ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার।
 
বক্তব্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একটি সমাজ কতটা সভ্য তা নির্ভর করে সে দেশের অপেক্ষাকৃত দুর্বল জনগোষ্ঠী কতটা ভালো আছে তার ওপর। আমরা দেখি, আমাদের সমাজে নারীরা এখনও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং তারা বিভিন্ন অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার। তাদের ওপর সবচেয়ে বড় নির্যাতন হলো যৌন নির্যাতন। আমরা মনে করি, তাদের প্রতি নির্যাতন রোধে প্রথমত একটি সমন্বিত আইন হওয়া দরকার।
 
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, যৌন হয়রানি এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা এবং আদালতের নির্দেশনা না জানা অথবা জানলেও তা না মানার কারণে কমছে না যৌন হয়রানি। বর্তমানে যৌন হয়রানি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
 
তারা বলেন, এটি এখন শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। সমস্যাটিতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন মাত্রা। এক হিসেবে দেখা যায়, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে নয়জন নারীই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে যৌন হয়রানির শিকার হন। হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রণয়নের দীর্ঘ নয় বছর পরেও কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। তাই বিশ্বের অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সবক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।
 
সভার শেষ পর্যায়ে একটি সমন্বিত যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরির জন্য পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।
 
আলোচনায় অংশ নেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) তানজীনা ইসমাইল, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মজিবুর রহমান, কুমিল্লা জেলা জজ জেসমিন আরা বেগম, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক শামসুন্নাহার, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা আবেদীন, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর পাবলিক প্রসিকিউটর আলী আসগর স্বপন, এনজিসিএএফ এর সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার জলি প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৮
ইএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।