ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘বাজেট তো আর পেটে ভাত দিবো না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৮
‘বাজেট তো আর পেটে ভাত দিবো না’ বিকসান। ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: বাজেট শব্দটির সঙ্গেই যেন অপরিচিত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক আজিজুল (৩৫)। পাশের আরেকজন বাজেট মানে বছরে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে-কমবে এমনটি বুঝিয়ে দিতেই গোমড়া মুখে আজিজুলের জবাব- ‘বাজেট বুঝি না, হেইডাই ভালা (সেটিই ভালো)। এইড্যা তো (বাজেট) আর আমগর (আমাদের) পেটে ভাত দিবো (দিবে) না।’

একটানেই বলে গেলেন আজিজুল। তিনি থাকেন সদর উপজেলার আজমতপুর এলাকায়।

অটোরিকশা চালান প্রায় তিন বছর ধরে। তার সঙ্গে আলাপের সময়েই এক অটোরিকশা যাত্রী কলেজছাত্র ইমরান আহমেদ মুখ খুললেন বাজেট নিয়ে।

বাজেট নিয়ে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দৃঢ়তার সঙ্গেই এ শিক্ষার্থী উচ্চারণ করলেন- যুগোপযোগী একটি বাজেট হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নিজের বিচক্ষণতার প্রমাণ দিয়েছেন। কৃষি জমির রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে রড, সিমেন্ট সবকিছুরই দাম কমেছে। প্রতিবারই বাজেটে জনগণকে শোষণ করা হলেও এবার জনবান্ধব বাজেট হয়েছে।

শুক্রবার (০৮ জুন) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর জিলা স্কুল মোড়, নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপাড় মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর বাজেট ভাবনা ও অভিমত সম্পর্কে জানতে চাইলে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়।

ইমরানের মুখ থেকে বাজেটের নানা দিক সম্পর্কে বিশ্লেষণ শুনে এবার হাসিমুখেই আজিজুল বলতে থাকলেন- ‘আসলে বাজেট বুঝলে তো ভালাই (ভালো)। অহন (এখন) তো দেখতাছি এই বাজেট গরিবের উপকারই করবো (করবে)। ’

এই বাজেট নিয়ে কোনো রকম মাথা ব্যথা নেই আরেক দরিদ্র রিকশাচালক জসিম উদ্দিনের (৪০)। বাজেট নিয়ে জানতে চাইলে গোমড়া মুখে উত্তর দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজেট দিয়া আমগর (আমাদের) কী অইবো (হবে)?’

জসিম বলেন, আমার কাম (কাজ) রিকশার প্যাডেল ঘুরাইয়া (ঘুরিয়ে) ভাত খাওয়া, হেইডাই (সেটাই) করতে লাগবো (লাগবে), যতোদিন দেহডায় (শরীরে) শক্তি আছে। ’

নগরীর নতুন বাজার মোড় এলাকায় আলাপ হচ্ছিল ফুলপুর উপজেলার একটি গ্রামের এ রিকশাচালকের সঙ্গে। জীবনের এ কঠিন পরিস্থিতির জন্য বার বার তিনি ভাগ্যকেই দোষারোপ করছিলেন।

দুই যাত্রী নিয়ে হনহন করে ছুটে যাবার আগে বলছিলেন, ‘আমগর মতোন গরিবরা বাজেট লইয়া ভাবে না। সব ভাবনা বড় লোকগর (লোকদের)। বাজেটে হেগর (তাদের) ভাগ্যের পরিবর্তন অইবো, আমগর (আমাদের) না। ’

একই এলাকার ফলের দোকানি সুজন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই বাজেট নিয়ে কোনো রকম গবেষণা করিনি। প্রতিবারই বাজেট হয়। কিন্তু আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের ব্যবসা নিয়েই টিকে থাকতে হয়। আমি মনে করি এই বাজেট যদি আমাদের মতো ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারে তবেই স্বার্থকতা থাকবে বাজেটের। ’

নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় প্রায় ছয় বছর ধরে পান-বিড়ি সিগারেটের দোকান করেন বিকসান নামে এক যুবক। বাজেট প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এ দোকানি বলেন, ‘প্রতিবার বাজেট হওয়ার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাইড়া (বেড়ে) যায়। আমাদের অনেক কষ্টে পড়তে হয়। এই লেইগ্যা (জন্য) আমার কাছে বাজেট মানেই ওপর তলার মানুষগর (মানুষদের) লেইগ্যা (জন্য)। ’

তবে এবারের বাজেট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ফেরদৌস আহমেদ নামে এক কলেজ শিক্ষক বলেন, এই বাজেটের সবচেয়ে বড় বিষয় নতুন করে কোনো কর বাড়ানো হয়নি। বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এই বাজেট ইতিবাচক। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৮
এমএএএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।