ঢাকা: আসন্ন ঈদ উপলক্ষে চাঁদাবাজি ছড়িয়ে পড়েছে পরিবহন সেক্টরে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘বিশেষ কথা ও কায়দায়’ চলছে চাঁদা আদায়।
পরিবহন শ্রমিকদের একটি অংশ, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ‘পুলিশ ও মতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট’ চাঁদাবাজ চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যানবাহন চালক ও মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেবিট্যাক্সি, টেম্পো, বাস, মিনিবাস ও ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি বিভিন্ন বিশেষণে চিহ্নিত। তারা চাঁদা তুলছেন ‘শ্রমিক কল্যাণ’র নামে। ট্রাফিক সার্জেন্টরা টাকা তুলছেন ‘ঈদ বোনাস’ হিসেবে। এসব ছাড়াও চাঁদার হরেক নাম- ‘বেকার ভাতা’, ‘রাস্তা কিয়ার ফি’, ‘ঘাট সিরিয়াল’, ‘পার্কিং চার্জ’ ইত্যাদি।
রাজধানীর মোড়ে মোড়ে চলছে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। পুলিশের ‘স্যারদের বোনাস’ আদায়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন যানবাহন চালকরা। এক প্রান্ত দিয়ে রাজধানীতে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে ট্রাক প্রতি ৫/৬শ’ টাকা চাঁদা গুনতে হচ্ছে তাদের।
ট্রাক চালকদের অভিযোগ, আগে সাধারণত ঢাকার যে কোন একজন সার্জেন্টকে ১০০ টাকা দিয়ে স্লিপ সংগ্রহ করতে হতো। ওই স্লিপ থাকলে নগরীর মধ্যে আর কোথাও পুলিশকে চাঁদা দিতে হতো না। কিন্তু এখন ‘প্রতি পয়েন্টেই সার্জেন্ট আলাদা আলাদা চাঁদা দাবি করছেন। এক সার্জেন্ট অন্য সার্জেন্টের স্লিপ আমলে নিচ্ছেন না। ’
পুলিশ সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করেন এমন পয়েন্টগুলোতে ঈদ বোনাসের রেটও নির্ধারণ করা আছে। ঢাকার বাইরে থেকে আগত স্বাভাবিক পণ্যবাহী প্রতি ট্রাককে দিতে হয় ১০০ টাকা করে। সন্দেহভাজন মালামাল থাকতে পারে এমন পরিস্থিতিতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হয়। একইভাবে ঢাকা থেকে পণ্য বোঝাই করে কোনো ট্রাক রাজধানীর বাইরে কোনো গন্তব্যে রওয়ানা দিলে ১০০/১৫০ টাকা ‘বোনাস হিসেবে’ ট্রাফিক সার্জেন্টকে দেওয়ার অলিখিত নিয়ম করা হয়েছে। রেন্ট-এ কার এর প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের েেত্রও একই পন্থায় চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তবে বিদেশ থেকে আসা যাত্রী বহনকারী কার-মাইক্রোবাসকে ৫০০ টাকার নিচে ছাড়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে রাজধানীর বাইরের মহাসড়কগুলোতে ট্রাফিক সার্জেন্টরা সহযোগীদের নিয়ে অপোকৃত নির্জন স্থানে অবস্থান নেন। কাগজপত্র চেকিং এর নামে ট্রাকগুলোকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ‘ঈদ বোনাস’ আদায় করেন তারা।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিপিএটিসি ফাঁড়ি, গাজীপুর রোডের টঙ্গী, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, বাইপাস মোড়, চট্টগ্রাম রোডের কাঁচপুর ব্রিজের অদূরে, সিলেট রোডের ভৈরব ঘাট, উত্তরবঙ্গ অভিমুখী সড়কে উত্তরার ধউর মোড়, সাভারের বাইপাইল ও কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড়ে পুলিশের চাঁদাবাজি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব স্থানে যানবাহন চালকদের টু শব্দটি করার জো নেই। চাঁদা দিতে একটু দেরি হলেই সার্জেন্ট-ট্রাফিক ও তাদের সহযোগিদের হাতে চড়- থাপ্পর পর্যন্ত খেতে হয় তাদের।
সায়েদাবাদ-গাবতলী রুটে চলাচলকারী মিনিবাস চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাঁদার চাপে গাড়ির চালক, মালিক, শ্রমিক অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। আর সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ সব বাস ও ট্রাক টার্মিনালের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। এসব টার্মিনালে গাড়ি ঢুকতে টাকা লাগে, বের হতেও টাকা লাগে।
উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার রুটে চলাচলরত কোচ চালকদের অভিযোগ, ইদানিং প্রায়ই কোনো না কোন স্থানে ‘বেকার ভাতা’ আদায় করা হচ্ছে। নিজেদের বেকার পরিবহন শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে একটি চক্র গাড়ি প্রতি ২০/২৫ টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকেন। বিভিন্ন টার্মিনাল মুখে অবস্থান নিয়ে নানা রঙের স্লিপে প্রকাশ্যেই চাঁদা আদায় করছেন তারা।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহিদুল হক রাজধানীর টার্মিনাল ও সড়কগুলোতে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির স্থান হিসেবে শতাধিক পয়েন্টকে চিহ্নিত করে সাদা পোশাকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন ও সিসি ক্যামেরা ফুটেজের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া আছে।
কয়েকজন সার্জেন্ট, ট্রাফিক ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১০