ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পুরান ঢাকার ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ সিলেটেও

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৮
পুরান ঢাকার ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ সিলেটেও পুরান ঢাকার ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ সিলেটেও বিক্রি হচ্ছে। ছবি: আবু বকর/বাংলানিউজ

সিলেট: ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নামটির সঙ্গে পরিচিত অনেকে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই ইফতার আইটেমটির নাম সিলেটেও বেশ ব্যাপক জনপ্রিয়। বরাবরের মতো এ বছরও বাজারে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে মুখরোচক এই খাবারটি। 

আস্ত খাসির পায়ের অংশ এবং ২০ রকমের মসলা ও খাদ্যদ্রব্য দিয়ে তৈরি ইফতারের এই সামগ্রী দামের দিক থেকে সৌখিনরা খেয়ে থাকেন। খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ইফতারের এই সামগ্রী কেনা অনেকটা সাধ্যের বাইরে।

‘বড় বাপের পোলায় খায়’ সিলেটি সংস্করণ প্রতি পিস ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

রোজাদারদের তৃপ্ত করতে সিলেটের রেস্তোরাঁগুলোতে বিক্রি হচ্ছে রকমারি ইফতার সামগ্রী। বাসায় ইফতার তৈরি থাকলেও রেস্তোরাঁর বাহারি ইফতার না হলে যেনো তৃপ্তি মেটাবার নয়। যে কারণে সিলেট নগরের রেস্টুরেন্টগুলোতে ইফতার কিনতে থাকে রোজাদারদের দীর্ঘ সারি।  

রোজার প্রথম ক’দিন সাধারণত বাসা-বাড়িতে ইফতার আয়োজন থাকায় রেস্তোরাঁয় ভিড় থাকে কম। কিন্তু এবার সিলেটে সে দৃশ্যপট ভিন্ন। রোজার প্রথম দিন থেকেই জমে উঠেছে সিলেটের ইফতার বাজার।  

বিকেল হতেই রেস্তোরাঁগুলোতে রোজাদারদের ভিড়। রেস্তোরাঁ ছাড়াও নগরের আনাচে-কানাচে দোকান ও ফুটপাতে ইফতার বিকিকিনি চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকাইয়া আদলে তৈরি হয়েছে অনেক ইফতার সামগ্রী। তাতে মজেছেন ক্রেতারা।  

‘বড় বাপের পোলায় খায়’ ছাড়াও এবার সিলেটের বাজারে আয়োজনে রয়েছে- ডিমের তৈরি নার্গিস কাবাব, আস্ত মোরগের রোস্ট, কাবাব, কোয়েল-কবুতর ভুনা, মোরগ পোলাও, পেস্তা বাদামের শরবত, বিফ চাপ, মোরগ মুসাল্লাম, বটি কাবাব, টিকিয়া কাবাব, কোফ্তা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিক কাবাব, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, বিফ আখনি, মুরগির আখনি, হালুয়া, হালিম, কাশ্মীরি শরবত, ইসবগুলের ভূষি, পরোটাসহ অর্ধশতাধিক জাতের ইফতার সামগ্রী।

মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে দই বড়া, বুন্দিয়া, অন্তত ২০ ধরনের দই ও জর্দ্দা। দামের দিক থেকে মিষ্টি জর্দ্দা ২৪০ টাকা এবং অন্যগুলো আড়াইশ’ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।  

এছাড়া ইফতারের ক্ষেত্রে সিলেটের লোকজনের প্রথম পছন্দ পাতলা খিচুড়ির ও ছোলা। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পাতলা খিচুড়ি জনপ্রিয়। কেননা দিন শেষে খালি পেটে পাতলা খিচুড়ি খেতে বেশ সুস্বাদু। পেটের জ্বালাপোড়া থেকে রেহাই পেতে পাতলা খিচুড়ি সিলেটে রোজাদারদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে।  

নগরের হাসান মার্কেটের একটি রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ী আকলিম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, রোজাদাররাও ভূনা ও পাতলা খিচুড়ি পছন্দ করেন। এসবের সঙ্গে ছোলা পিঁয়াজু, বেগুনি, বাখরখানি, জিলাপী ও মুড়ি বিক্রি করছি। এবার দ্বিতীয়দিনে ইফতারের বাজার জমে উঠেছে।  

সিলেটের জিন্দাবাজার পালকি ও ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টের ইফতার আয়োজনে এবারও ঢাকাইয়া ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ রয়েছে। এসব রেস্তোরাঁ ছাড়াও পানসি, পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টের ইফতার সামগ্রী কিনতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।  

শনিবার (১৯ মে) রমজানের দ্বিতীয়দিন দুপুর থেকেই হোটেল রেস্তোরাঁর বারান্দায় ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন মালিক ও কর্মচারীরা। দুপুরের পর থেকে নির্ধারিত স্থানে শোভা পেতে শুরু করে ইফতার সামগ্রী।  

বিকেল থেকেই পড়েছে বেচা-কেনার ধুম। বিকেলে ইফতার কিনতে দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। আর যারা হোটেলে ইফতার সেরে নেন তাদের মধ্যে আসন দখল নিয়েও চলে প্রতিযোগিতা। ইফতারের আধাঘণ্টা আগে থেকেই রেস্তোরাঁগুলোতে দেখা যায় এরকম চিত্র।

এদিকে গতবছরের মতো এবারও ইফতারির বাজারে চড়া দাম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি হচ্ছে  ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। মাটন লেগ রোস্ট ২৯০ টাকা, আস্ত মোরগের রোস্ট ৩৬০, বিফ আখনি ২৮০, চিকেন আখনি ২৫০ ও  মাটন আখনি ২৮০ টাকা প্রতিকেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  

এছাড়া প্রতিকেজি জিলাপি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, দই বুন্দিয়া প্রতিকেজি ২০০ টাকা, ফিরনি প্রতিকেজি ২২০, চিকেন পরোটা ছোলা ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাবাবের মধ্যে চিকেন রেশমী ৬০টাকা, চিকেন ফ্রাই ৭০টাকা, চিকেন স্টিক ৭০ থেকে ৯০ টাকা দরে প্রতিপিস বিক্রি হয়।  

আর চিকেন নার্গেট ৫০ থেকে ৮০, বিফ জালি কাবাব ২০ থেকে ৪৫, বিফ স্টিক ৪০ থেকে ৬০ টাকা ও  বাখরখানি ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত প্রতিপিস বিক্রি গতে দেখা যায়।

ইফতারের দাম বাড়ার পেছনে কারণ হিসেবে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা মনে করেন, রোজা এলেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এ কারণে ইফতার সামগ্রীর উপর দামের প্রভাব পড়ে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৮
এনইউ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।