বুধবার (১৬ মে) ভোর ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাড়ে ১৬ ঘণ্টাব্যাপী ২০ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে তীব্র যানজটে যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল চরমে। ভোরে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বাসে রওয়ানা হলেও বিকেল অবধি অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করতে পারেনি বেশিরভাগ যাত্রীরা।
যানজট নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করলেও কোনোও ফল মিলছিলো না। দুপুরের দিকে যানজটের অবস্থা দেখতে সরেজমিনে গেলে সেখানে মানুষের নানা দুর্ভোগের দৃশ্য উঠে আসে। সকাল থেকেই চলা এই দুর্ভোগে একেবারেই নাকাল হয়ে পড়েছেন এই সড়কে যাতায়াত করা যাত্রীরা। এদের অনেকেই চলতি পথে অসুস্থও হয়ে পড়েন।
ঢাকা-কুমিল্লা রুটের দোয়েল বাসের হেলপার ফরিদ বাংলানিউজকে জানান, রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সকাল ৯টায় রওয়ানা দিয়ে বিকেল ৩টায় মদনপুর পৌঁছেছেন।
যানজটে আটকে পড়া যাত্রীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা পড়তে হয় ক্ষুধায়। একইসঙ্গে আরেক সমস্যা ছিল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া। উপায় না পেয়ে পুরুষ যাত্রীরা পথে কাজ সারলেও নারীদের পড়তে হয় অমানবিক বিড়ম্বনায়।
নারী যাত্রী রাহিমা বাংলানিউজকে জানান, সকাল থেকে এভাবেই বাসে বসে আছি। সায়েদাবাদ থেকে যাবো দাউদকান্দি। এখনও বাসে রয়েছি। সঙ্গে ছোট বাচ্চা। বাচ্চার বাবা তো পথেই প্রাকৃতির ডাকের কাজ সেরেছেন। আমরা...? কখন যে পৌঁছবো তারও ঠিক নেই।
জানা যায়, মূলত মেঘনা টোলপ্লাজা, ফোর লেন টু ২ লেন, বিভিন্ন পয়েন্টে সিগন্যাল, ওভারটেকিং টেন্ডেসি, ফিটনেসবিহীন গাড়িসহ বিভিন্ন কারণে এখানে যানজট নিয়মিতই লেগে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি ফেনীর যানজটটি আরও প্রকট হওয়ার কারণে যানজটে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা আর তা সামাল দেওয়াই এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিমরাইল মোড়ে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম জানান, কুমিল্লায় সৃষ্ট যানজটের কারণে নারায়ণগঞ্জেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকা থেকে গাড়িগুলো ফোর লেনের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে এসে কাঁচপুর ব্রিজে এসে টু লেনের মাধ্যমে যেতে হয়। এতে করে গাড়ির গতি কিছুটা স্লো হয়ে যায়। তখনই যানজটের সৃষ্টি হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম জানান, ভোর ৪টার দিকে বৃষ্টির কারণে দাউদকান্দিতে অবস্থিত মেঘনা গোমতী সেতুর উপরে সড়কে ট্রাফিক বিভাগের লোকজন ছিল না। তখন কিছু গাড়ি একজন আরেকজনের আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে যানজট বাঁধিয়ে ফেলে। সেই যানজট ছাড়াতে না ছাড়াতেই কিছুক্ষণ পরে একটি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। ওই যানজটের রেশ নারায়ণগঞ্জের অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা গাড়ির চাপের উপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে চারলেন থেকে সড়কে উঠার পর এক লেনে করে গাড়িগুলো বের করে দিচ্ছি। সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে ১৬টি গাড়ি নষ্ট হয়েছে। এসব কারণেই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোও যানজটের অন্যতম কারণ। আমরা চেষ্টা করছি যেন দ্রুতই এ যানজট দূর করা যায়। যানজটের মূল সুত্রপাত ফেনী থেকে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৮
এএটি