একসময় তাদের বাপ-দাদারা ওই উপজেলায় যমুনেশ্বরী নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সময়ের পথ পরিক্রমায় আগের মতো আর নদীতে পানি ও মাছ না থাকায় বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে দিয়ে তারা প্রত্যেকে কৃষি শ্রমিকের কাজ করছেন।
বুধবার (২ মে) তারা তিনজনেই এসেছেন বিশাল আকারের জাল নিয়ে যমুনেশ্বরী নদীতে মাছ ধরতে। সরেজমিনে মঙ্গলবার (০১ মে) খবরের সংগ্রহে উপজেলা ঘুরে দেখার সময় চোখে পড়ে বিশাল আকারে জাল দিয়ে যমুনেশ্বরী নদীতে মাছ ধরছেন রজনী কান্ত দাস এবং তাকে সহযোগিতা করছেন একই এলাকার বসন্ত দাস ও সুশান্ত দাস।
নদীতে জাল ফেলার ফাঁকে কথা হয় রজনী কান্ত দাসের সঙ্গে, তিনি জানান, সেই সকাল থাকি মাছ মারোচি, এখন দোপড় গড়োছে, মাছ পাইনো তিন পোয়ার মতন। জাল ধরি হামার খালি ঘোরায় সার। মাছ আর পাইনো না।
তিনি বলেন, 'আগে হামার বাপ-দাদারা এই নদীত মাছ ধরি সংসার চালাইছে। হামরাও এক সময় বাপের সঙ্গে মাছ ধরি বেড়াইছি। তখন অনেক মাছ আছিলো। এখন আর নদীত মাছ নাই। নদীত মাছ নাই দেখি হামরা এখন বাধ্য হয়্যা কৃষি শ্রমিকের কাম করি। এই সময়টাতে তেমন কোনো কাম নাই। বেকার হয়্যা আছি। ভাবনো, নদীত যাই, যদি মাছ পাই, তাইল্যে আজকের দিনটা অন্তঃত কোনো রকমে চলবে। মাছ তো পাইনো না। এ সময় কথা হয় সুশান্ত দাসের সঙ্গে, তিনি জানান, জালটা অনেক বড়। একজন জাল ধরি থাকে আর হারা দু'জন বড় দড়ি ধরি অনেক দুর পর্যন্ত পানিত ডাং দিতে থাকি, এক সময় পানিত ডাং দিতে দিতে মাছ জালের কাছোত নিয়া আসি। পরে জাল তোলা হয়। আগোত এই জাল দিয়া হারা অনেক মাছ ধরছেনো।
তিনি আরও জানান, এই যে হারা তিনজন। মাছ পাইনো তিন পোয়ার মতন। এখন্যা মাছ দিয়্যা কি হইবে? মাছ মাইরব্যার আসস্যাটাই হামার ভুল হইছে।
অপর ব্যক্তি বসন্ত দাস বলেন, হামার মতন গরিব মানুষের এই সময়টাতে কাজ কাম না থাকায় খুব কষ্ট হয়। কি আর করার, দিন তো পার করব্যার নাগবে ?
বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম জানান, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, নদী ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থল নষ্ট করা, ডোবা-নালা সেচ দিয়ে মাছ ধরা, জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, রাক্ষুসে মাছের চাষসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেশিয় মাছ বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল আলম পারভেজ জানান, নদ-নদীগুলোতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে কথাটি সত্য। কারণ হিসেবে তিনি জানান, মাছের অভয়াশ্রম নষ্ট হয়ে যাওয়া ও নতুন অভয়াশ্রম সৃষ্টি না হওয়ায় এ এলাকায় দেশিয় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। তবে মৎস্য বিভাগ মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র সৃষ্টির মাধ্যমে দেশিয় প্রজাতির মাছের অভাব পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৮
এএটি