বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল ইসলাম এ পরোয়ানা জারি করেন।
আসামিরা হলেন-ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট'র কৌলী সম্পদ ও বীজ বিভাগের ফিল্ড ম্যানেজার মো. ফারুক হোসেন, তার স্ত্রী রুমা বেগম ও বাবা মো. হারুন-অর-রশীদ এবং ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট'র কৌলী সম্পদ ও বীজ বিভাগের ম্যানেজার মো. আক্কাছ সরদার ও কর্মকর্তা মো. এনামুল হক।
প্রতারণার শিকার খুলনার বিএল কলেজের ছাত্র মো. ওহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৪ মার্চ খুলনার আমলি আদালত ‘গ’ অঞ্চলে মামলাটি দায়ের করেন। (মামলা নম্বর- সিআর ৮৪/১৮)। আদালতের বিচারক (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) মো. শাহীদুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। পুলিশ অভিযোগটি তদন্ত করে ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আদালত বৃহস্পতিবার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী বিধান ঘোষ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গাওলা গ্রামের নূর আলীর ছেলে বাদী ওহিদুল ইসলাম এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি খুলনার বিএল কলেজের অনার্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার সঙ্গে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট'র ফিল্ড ম্যানেজার ফারুক হোসেনের বাবা মো. হারুন-অর-রশীদের পরিচয় রয়েছে। সেই সুবাদে হারুন-অর-রশীদ তাকে নয় লাখ টাকার বিনিময়ে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-এ ‘অফিস সহকারী’ পদে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তার কথায় সম্মত হলে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলিয়ে দেন তিনি।
এরপর তিনি টাকা সংগ্রহ করে হারুন-অর-রশীদকে খবর দেন। পরে গত বছরের ১২ মে হারুন তার ছেলে ফারুক ও ছেলের স্ত্রী রুমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে বিএল কলেজের মহসিন হলের ১০৬ নম্বর কক্ষে আসেন। এসময় বাদী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দিতে চাইলে তারা রাজি হননি। এ কারণে কয়েকজন সাক্ষীর সামনে তাদের হাতে নগদ নয় লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়। এসময় তারা বাদীর কাছ থেকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগের একটি আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং অন্যান্য কাগজপত্রও নিয়ে যান। পরে ২১ মে বাদীকে চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-এ যেতে বলা হয়। সে মোতাবেক তিনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-এ গেলে ফারুক তাকে ইনস্টিটিউট'র ম্যানেজার মো. আক্কাছ সরদার ও কর্মকর্তা মো. এনামুল হকের কাছে নিয়ে যান। তারাই তার কথিত ইন্টারভিউ নেন। ওই দিনই তাকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে একটি ভুয়া নিয়োগপত্র দেয়া হয়। যাতে ওই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) জাহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। একই সঙ্গে ওই নিয়োগপত্র দেখিয়ে তাকে বাগেরহাট সিভিল সার্জনের দফতর থেকে মেডিকেল সনদ নিয়ে ১ জুন চাকরিতে যোগদান করতে বলা হয়। বাদী তাদের কথামত মেডিকেল সনদ নিয়ে গেলে তাকে কথিত চাকরিতে যোগদান করানো হয়। যোগদানের পর অভিযুক্তরা তাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে অফিসের পার্শ্ববর্তী একটি ধান ক্ষেতে নামিয়ে দিয়ে বলেন, ধান চাষ দিয়েই তোমার ট্রেনিং শুরু হলো। তবে কেউ জিজ্ঞাসা করলে তুমি এখানে চাকরিতে যোগদান করেছো- সেটি বলবে না।
এতে বাদীর মনে কিছুটা সন্দেহ সৃষ্টি হলেও চাকরি নামক 'সোনার হরিণ’ পাওয়ায় তিনি মনোযোগ দিয়ে ধান চাষের কথিত ট্রেনিং চালিয়ে যেতে থাকেন। এভাবে এক মাস পার হলে বেতন বাবদ তাকে চায়ের দোকানে ডেকে একটি হাজিরা রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর নিয়ে ১১ হাজার ৩শ’ টাকা দেওয়া হয়। এভাবে সেখানে তার মতো এনামুল হক ও আক্কাস সরদার নামে আরও দু’ জনকেও কথিত বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় মাসে কোনো বেতন না দেয়ায় সন্দেহ বেড়ে যায় তার। বিষয়টি জানতে চাইলে অভিযুক্তরা তাকে জানান, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য সময় লাগবে, চার/পাঁচ মাস কোনো বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। এসময় তিনি প্রতিবাদ করলে তারা জীবননাশের হুমকি দিয়ে তাকে বের করে দেন। এভাবে তারা বেকার যুবকদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এর আগেও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে একাধিক বেকার যুবকের কাছ থেকে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট র্যাব-১’র সদস্যরা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট'র ফিল্ড ম্যানেজার মো. ফারুক হোসেনসহ নয়জনকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় প্রতারণার শিকার যুবক খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার লাইন বিল পাবলা গ্রামের রাজেন্দ্রনাথ পাত্রের ছেলে উজ্জ্বল কুমার পাত্র বাদী হয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
এমআরএম/এসএইচ