মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ষাট দশকের অন্যতম এই কবি।
তার মৃত্যুর বিষয়টি বাংলানিউজকে তার বড় ছেলে আবদুল্লাহ প্রতীক চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
** বেলাল চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রতীক চৌধুরী জানান, হাসপাতালে তার চাচা, বাবার বন্ধুরা উপস্থিত রয়েছেন। তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
কবি বেলাল চৌধুরী ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, রক্তশূন্যতা, হাইপোথাইরোটিজসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে কবি মূত্রনালির সংক্রমণজনিত ‘সেফটিসেমিয়া’ রোগেও ভুগছিলেন।
দীর্ঘ চার মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। শুক্রবার (২০ এপ্রিল) কবির অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী এই কবি কবিতা ছাড়াও সাহিত্যের অন্যসব শাখায়ও সক্রিয় ছিলেন। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক হিসেবেও তিনি ছিলেন বিশিষ্ট। একদা সাংবাদিকতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বেলাল চৌধুরী। ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস থেকে প্রকাশিত ‘ভারত বিচিত্রা’র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। রূপালী গ্রুপের ‘সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ’ পত্রিকাটিও তিনি সম্পাদনা করতেন। বেশ কয়েক বছর কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা ‘কৃত্তিবাস’- এ চাকরি করেন।
তার কলকাতাবাসের সময়ে সেখানে আধুনিক বাংলাকবিতার দিকপাল কবিদের সঙ্গে তার পরম সখ্য গড়ে ওঠে। বন্ধুভাগ্যের দিক থেকে তার জুড়ি মেলা ভার। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ, লরেন্স ফার্লিংঘেট্টিসহ দেশ-বিদেশের বহু কবির সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব, চলাফেরা, আড্ডা ও নিবিড় যোগাযোগ ছিল বেলাল চৌধুরীর। দুই বাংলার কবিদের সেতুবন্ধ রচনার সূত্রধর ছিলেন তিনি। শক্তি চট্টোপাধ্যায় আর বেলাল চৌধুরী ছিলেন এককথায় হরিহর আত্মা। তাদের বন্ধুত্ব ও আড্ডার নানান কাহিনী আজো দুই বাংলার কবিদের আড্ডার খোরাক।
অমায়িক স্বভাবের এই কবি তার ব্যক্তিত্বের স্নিগ্ধতা ও মধুরতা দিয়ে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। বয়সের ব্যবধান ও গাম্ভীর্যকে দূরে ঠেলে পরম বন্ধুর মতো তিনি অকপটে মিশতে পারতেন তরুণ কবিদের সঙ্গে। আড্ডায়, কবিতা ও শিল্পের আলোচনায় তার উপস্থিতি গোটা পরিবেশকে প্রাণময় করে রাখতো। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন অজাতশত্রু। দুই বাংলায় তার গুণগ্রাহীর সংখ্যা তাই এতো বিপুল।
তার উল্লেখযোগ্য কবিতাবইয়ের মধ্যে আছে ‘নিষাদ প্রদেশে’, ‘আত্মপ্রতিকৃতি’, ‘স্থিরজীবন ও নিসর্গ’, ‘স্বপ্নবন্দী’, ‘সেলাই করা ছায়া’, ‘কবিতার কমলবনে’, ‘যাবজ্জীবন সশ্রম উল্লাসে’, ‘বত্রিশ নম্বর’। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে তিনি একুশে পদক পান। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও। ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী গ্রামে ১৯৩৮ সালের ১২ নভেম্বর তার জন্ম।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এমএইচএস/এসএইচ/জেএম