ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লক্ষ্মীপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
লক্ষ্মীপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ ভেক্যু দিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে, ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে-দুর্যোগ  ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের আওতায় সদরের চররমনী মোহন ‘জান্নাতুল মাওয়া’ আশ্রায়ণ প্রকল্পে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের মাটি ভরাট কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

মেঘনা নদীর সংযোগ খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মজুরিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ না করে এক্সক্যাভেটর মেশিন (ভেক্যু) দিয়ে মাটি ভরাট করায় প্রকল্পের সভাপতি ও চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়ালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, পরিকল্পনা ছাড়াই রহস্যজনক কারনে দুর্গম মেঘার চরে এ প্রকল্পটি দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা এটিকে লুটপাটের প্রকল্প আখ্যায়িত করে বলছেন, ওই চর ও আশপাশ এলাকায় কোন বসতি নেই। সেখানে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় ট্রলার-নৌকাযোগে যেতে হয়। এছাড়া নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই নেই।

সম্প্রতি প্রকল্পের নানা অনিয়ম নিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে চলমান প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সেখানে প্রকল্পটি করার কোনো যৌক্তিকতা ছিলো না বলেও জানান তিনি।

সদর উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের আওতায় সদরের চররমনী মোহন জান্নাতুল মাওয়া আশ্রায়ণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রকল্পটির ২ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনে মাটির কাজের জন্য ৪৯৪ দশমিক ৩৩৩ মেট্টিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর সরকারি মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৯ টাকা। এর মধ্যে মূল মাটির কাজে ১৮৮ দশমিক ৬৫৬ এবং সর্দার সুপারভাইজারসহ আনুসাঙ্গিক কাজের জন্য ৩০৫ দশমিক ৬৭৮ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ হয়। প্রতি ঘনমিটার মাটির কাজে ৩ দশমিক ২৭৬ হারে (গম) মজুরিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করার কথা রয়েছে।  প্রতি টন গম উত্তোলনে ১২৫ জন শ্রমিক মজুরি দেখানো হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের জন্য ২২ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

সম্প্রতি ওই প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কোনো শ্রমিকই নিয়োগ করা হয়নি। একটি এক্সক্যাভেটর মেশিন (ভেক্যু) দিয়ে মাটি ভরাটরের কাজ করা হচ্ছে। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রকল্পের চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল কাজ করছেন। পাশে মেঘনা নদীর সংযোগ খালে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন তিনি।

জেলে ফখরুল ইসলাম ও ইসমাইল জানায়, নদীতে দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এসময়ে তারা কর্মবিমুখ থাকেন। তাদের কাজের খুব অভাব থাকে। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজ করতে পারলে, তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে দিন কাটাতে পারতেন। বর্তমানে ড্রেজার ও ভেক্যু দিয়ে মাটি কাটার কারণে তারা কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআই) সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের সভাপতি ২৫০ মেট্রিক টন গম উত্তোলন করেছেন। নিয়মানুযায়ী কাজ শেষ হলে বাকি বরাদ্দ ছাড় দেওয়া হবে।

প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল বলেন, দুর্গম চরে নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় বাস্তবতার ভিত্তিতে কাজটি করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়েই খাল থেকে কিছু বালু উত্তোলন ও ভেক্যু মেশিন দিয়ে মাটির কাজ করা হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী মজুরি দেওয়া সত্বেও চরে কাজ করার মতো শ্রমিকও পাওয়া যায় না। এছাড়া সরকার ২৯ হাজার টাকা গমের মূল্যে নির্ধারণ করে থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে আমরা পাই ১৬ হাজার টাকা।

লক্ষ্মীপুর অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছি। বাস্তবতার ভিত্তিতে সেখানে ভেক্যু মেশিন দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক বরাদ্দ ছাড় দেওয়া হয়েছে।  

তিনি আরো বলেন, ওই চর ও আশপাশ এলাকায় কোনো বসতি নেই। সেখানে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ কোনো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই, তারপরও কোনো এটি করার হচ্ছে তার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখছি না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
এসআর/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।