শহিদুল ও ভুট্টু দু’জনই জেলার সাদুল্লাপুরে উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম কেশালীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে দু’জনই গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
গত ৪ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেন ভুট্টু ও তার সহযোগীরা এবং তারপর ৮ এপ্রিল স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শহিদুল। মামলার বিবাদী ‘আদম ব্যাপারী’ নন বলে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।
পশ্চিম কেশালীডাঙ্গা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহিদুল পেশায় দিনমজুর। মাঝেমধ্যে তিনি ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালান। কোনোরকমে সংসার চলে তার। ভুট্টু মিয়া তার ‘পরিচিতজন’। শহিদুলের বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে প্রতিদিন জুয়া খেলতে যেতেন ভুট্টু। সে সুবাদে শহিদুলের বাড়িতেও যাতায়াত করতেন তিনি। শহিদুলের পরিবারের অভিযোগ, এই বাড়িতে যাতায়াতের মধ্যে শহিদুলের তিন মেয়ের মধ্যে কলেজপড়ুয়া বড় মেয়ের ওপর চোখ পড়ে ভুট্টুর। তাই শহিদুলকে একটি প্রকল্পে কাজ দেওয়ার কথা বলেন, সেজন্য অগ্রণী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলে দেন। পরে চেক বইয়ের দশটি পাতায় অর্থের অংকের ঘর ফাঁকা রেখে শহিদুলের কাছে থেকে সই করিয়ে নেন ভুট্টু। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি কাউকে এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও জানাতে নিষেধ করেন।
এরপর শহিদুলের বড়মেয়েকে কলেজে যাওয়ার পথে ভুট্টু বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হন। এতে ক্ষেপে যান তিনি। পরে মেয়েটি বাড়িতে এসে ভুট্টুর বিয়ের প্রস্তাবের বিষয়টি জানান মা-বাবাকে। ভুট্টুর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে শহিদুল তার সঙ্গে বিবাদে জড়ান। এরপর তার কাছ থেকে চেকবইটি ফেরত চান। কিন্তু ভুট্টু সেটি না দিয়ে শহিদুলকে তার বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। শহিদুল ও তার পরিবারের কেউই এতে রাজি নয় বলে জানালে ভুট্টু তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
শহিদুলের স্বজনদের অভিযোগ, এই বিবাদের মধ্যে সই করা সেই চেকগুলোতে গত ৬ ডিসেম্বর তারিখ দেখিয়ে ভুট্টু নিজের নামে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ১৭ ডিসেম্বর তারিখ দেখিয়ে তার সহযোগী পাশ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত ধোপাডাঙ্গা গ্রামের আবু হানিফের নামে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও উত্তর ধোপাডাঙ্গা গ্রামের মুকুল মিয়ার নামে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা লিখে রাখেন।
এরপর চেকগুলো ব্যাংকে জমা দেওয়া হলে টাকা না থাকায় শহিদুলের নামে নোটিশ জারি হয়। তারপরই ১৭ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের তিনটি মামলা করেন ভুট্টু ও তার দুই সহযোগী আবু হানিফ ও মুকুল মিয়া। এ বিষয়ে কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুর রহিম ভরসা বাংলানিউজকে বলেন, ‘শহিদুল দরিদ্র ও অসহায় মানুষ। ঠিকমতো তিনবেলা ভাত খেতে পারাও তার জন্য কষ্টকর। সেখানে তার বিরুদ্ধে ১৭ লাখ টাকার চেকের মামলা নেহাত ভিত্তিহীন। তাকে ফাঁদে ফেলানোর জন্য এমনটা করা হয়েছে। ’
শহিদুল ‘আদম ব্যাপারী’ নন বলে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রহিম ভরসা প্রশাসনকে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে ভুট্টুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
ভুট্টুর একাধিক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভুট্টুর ঘরে বর্তমানে পঞ্চম স্ত্রী রয়েছেন। সম্প্রতি মোবাইলে প্রেম করে প্রবাসী স্বামীর প্রায় ২৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে ভুট্টুর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। আগের চার স্ত্রীকে নির্যাতন করায় ভুট্টুর সঙ্গে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ’
শহিদুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি একজন রিকশাচালক, বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে কারও কাছে থেকে কোনো টাকা নেইনি। আমার জীবনে ব্যাংকে কোনো অ্যাকাউন্টও ছিল না। ভুট্টু মিয়া মাটি কাটার কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আমার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। পরে ফাঁকা চেকে সই নিয়ে আমাকে বিপদে ফেলেছেন। ’
ভুট্টু মিয়া বলেন, ‘শহিদুল বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আমার ও অন্য আরও দু’জনের কাছে থেকে ১৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। পরে বিদেশে পাঠাতে ব্যর্থ হলে তার দেওয়া চেক ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর জানতে পারি সেই অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। পরে নোটিশ দেওয়ার পরও টাকা না পাওয়ায় আমরা শহিদুলের নামে মামলা দায়ের করি। ’
মামলার বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমাদের জানা আছে, আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
এএটি/এইচএ/