সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কে বর্ষা শুরুর আগেই প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নেওয়া হচ্ছে। বড় আকৃতির ক্রেন ও ভারী মেশিনারিজ ব্যবহৃত হচ্ছে।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডাব্লিউও(পশ্চিম)। বাস্তবায়নকাল দুই মাস বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন করা হয়েছে। মহাসড়কে সেতু থাকছে ৩১টি (পিসি গার্ডার ২০টি ও আরসিসি ১১টি), বড় সেতু ধলেশ্বরী-১ (২৫৮.০৫ মিটার), ধলেশ্বরী-২ (৩৮২.০৫ মিটার) এবং আড়িয়াল খাঁ (৪৫০.০৫ মিটার)। ৪৫টি কালভার্ট, ৩টি ফ্লাইওভার, গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এবং ভাঙ্গায় ২টি ইন্টারচেঞ্চ।
প্রকৌশলী সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, ধলেশ্বরী-২ এর পাইল শেষ এবং একটি পাইল ক্যাপ বাকী আছে। সুপার স্ট্রাকচারের পার্ট, গার্ডারের কাজ চলছে। ধলেশ্বরী-১ এর ৯টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ৩টি বাকী আছে এবং পাইল, পিয়ারের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ৪৫টি কালভার্টের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। বর্ষার আগেই কালভার্টের নিচের অংশের কাজগুলো সেরে নেওয়া হচ্ছে।
আব্দুল্লাহপুর ফ্লাইওভারের পাইল, পিয়ার ও পিয়ার ক্যাপ শেষ এবং পিয়ার হেডের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। গার্ডারের কাজ শুরু এবং অক্টোবরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। এই ফ্লাইওভারের ৩০ শতাংশ কাজ বাকী। শ্রীনগর ফ্লাইওভারের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ এবং পিয়ার হেড, গার্ডারের কাজ চলছে। লিংক রোড ফ্লাইওভারের(২.৩ কিলোমিটার) ৭৬টি পিয়ারের মধ্যে ৩৪টির কাজ শেষ ও পাইল ক্যাপ, গার্ডারের কাজ চলছে। মহাসড়কে ফ্লাইওভার কালভার্ট, ব্রিজ, সেতু, লিংক রোড, আন্ডারপাস, ইন্টারচেঞ্জ এসবের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ।
জুরাইন রেলওয়ে ওভারপাসের পাইল শেষ ও পাইল ক্যাপের কাজ চলমান। কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভারপাসের গ্রাউন্ড ট্রিটমেন্টের কাজ চলছে। আতাদিতে রেলওয়ে ওভারপাসের ৪০ শতাংশ স্ট্রাকচারের কাজ শেষ। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এবং ভাঙ্গায় ইন্টারচেঞ্জের কাজ হচ্ছে।
আরোও জানা যায়, ওয়াসার পানির লাইন প্রকল্প ল্যান্ড এভিশন করেনি সংশ্লিষ্টরা। রাস্তা ও মালামাল রাখার জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করায় কাজে বিঘ্ন ঘটছে। একটি টোল প্লাজা ধলেশ্বরীর কাছে আরেকটি পদ্মার ওপারে হবে। এসবের নকশা প্রস্তুত আছে এবং মহাসড়কের কাজ শেষ হলেই কাজ শুরু হবে। চার লেনের ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কের সার্বিক অগ্রগতি ৪২ শতাংশ। ৫৮ শতাংশ বাকী কাজ ফিন্যানশিয়াল ও ফিজিক্যাল।
পিএসসি কমিটির সভা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর দাম আগের থেকে বেড়েছে। অধিগ্রহণ জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। খনন কাজের পরিমাণ ১৬.২১ এর পরিবর্তে ১৯.১৬ ঘনমিটার করে ব্যয় বেড়েছে ১৮.২৬ শতাংশ। বালু ভরাট ৯০.৪৩ ঘনমিটারের পরিবর্তে ১৪৩.৩৯ ঘনমিটার করা হয়েছে। মাটির কাজে ব্যয় বেড়েছে ৭৮ শতাংশ, পেভমেন্টে ৫৪ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। মহাসড়কের ভিত নির্মাণে ২৫৭ শতাংশ খরচ বেড়েছে। মহাসড়কের সাব-বেইজ ২২৫ মিলিমিটারের পরিবর্তে ২৭৫ মিলিমিটার, ডিবিএস বেইজ কোর্স ১৪০ মিলিমিটারের পরিবর্তে ১৬০ মিলিমিটার করা হয়েছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় ১০ হাজার ৮৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটি।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইউরোপে চার লেনে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ২৮ কোটি টাকা, ভারতে ব্যয় ১০ কোটি টাকা, চীনে গড়ে ১৩ কোটি টাকা। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বর্তমান নির্মাণ ব্যয়ে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ১২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। যদি নির্মাণ ব্যয় তিন হাজার ২৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকা বৃদ্ধি পায় তবে কিলোমিটার প্রতি খরচ ১৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা হবে। কিলোমিটার প্রতি সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয়ে এটিই হবে বিশ্বের ব্যয়বহুল মহাসড়ক।
মহাসড়কের দু’পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন হচ্ছে। ট্রাফিক ক্রসিং নেই, যানবাহনগুলো নিরবচ্ছিন্ন চলাচল করবে। মহাসড়ক অংশ দিয়ে চলবে দ্রুতগতির গাড়ি এবং ধীরগতি বা লোকাল যানবাহনের জন্য আলাদা লেন। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া লোকাল যানবাহন মহাসড়কে উঠতে পারবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৮
আরএ