তাদের হাতের তুলির প্রলেপ থেকে বাদ পড়ছে না মাটির সরা আর জলরঙে আঁকা চিত্রকর্মও। সব মিলিয়ে তুমুল কর্মব্যস্ততা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সবুজ আঙিনাজুড়ে।
শনিবার (০১ এপ্রিল) চারুকলায় ঘুরে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের এমন ব্যস্ততার চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জয়নুল গ্যালারির সামনে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে রং-বেরঙের চিত্রিত সরা। জলরঙের চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে দেয়ালে। নবীন শিক্ষার্থীরা প্রাঙ্গণে মেতে আছেন কাজে।
কেউ বাঁশ-কাঠ কাটাকুটি করছেন, কেউ কাগজ কাটছেন বিভিন্ন আকৃতির। হাতে সময় আর বেশি নেই। কেননা নববর্ষ কড়া নাড়ছে দ্বারে। বাঙালির প্রাণের এ উৎসবকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বরাবরের মতোই এবারও নিয়েছেন ব্যাপক প্রস্তুতি।
এবছর অনুষদের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাদের সঙ্গে অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকসহ চারুশিল্পীরাও যোগ দিয়েছেন। তাদের সমন্বয়েই তৈরি হয়েছে মাটির সরা, জলরঙের চিত্রকর্ম, মুখোশ আর বিভিন্ন ফেস্টুন।
অনুষদের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে সেসব শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। এগুলো বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপনের তহবিল গঠনের জন্য বলে জানালেন মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৫ কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আফি আজাদ।
তিনি বলেন, আমরা সরাসরি সাহায্য নয়, বরং বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই এ আয়োজনে। এখানে বর্তমানে নামমাত্র মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে শিল্পীদের এসব শিল্পকর্ম। এর সবগুলোই খরচ করা হবে শোভাযাত্রার কাজে।
শিল্পানুরাগীরাও আগ্রহ ভরে শিল্প তৈরি করা এবং তা ক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলেও জানান আয়োজক কমিটির মো. আফি আজাদ।
এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ফকির লালন সাঁইয়ের ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ মর্ম বাণীকে।
এ ব্যাপারে চারুকলা অনুষদের ডিন ও জাতীয় বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, এবারে লালন সাঁইয়ের ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি...’ বাণীকে শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে সোনার মতো খাঁটি মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা সেই খাঁটি মানুষকেই খুঁজবো।
চারুকলা ঘুরে এবং বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রস্তুতি কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো। অন্যান্যবার যেখানে এপ্রিলের ১ তারিখে কাজ শুরু হয়, সেখানে এবার কাজ শুরু হয়েছে মার্চের ২০ তারিখ থেকে। আর এ ১০ দিনে কাজ যেমন এগিয়েছে, তেমনি মোটামুটি একটা অনুদানও সংগ্রহ হয়েছে।
এবারে শোভাযাত্রায় পেপার কাটিং মাস্ক (কাগজের উপর মাটির মুখোশ) হিসেবে দেখা যাবে পেঁচা ও বাঘের মুখ। পেপার ম্যাশ (কাগজের মুখোশ) হিসেবে থাকছে রাজা, রাণী, টেপা পুতুল আর সূর্য।
এছাড়া প্রাথমিকভাবে বড় বড় হাতি-ঘোড়া-বাঘ-পুতুলের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯টি। তবে আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অমঙ্গলকে দূর করার জন্য বাঙালির নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, প্রাণির প্রতিকৃতি ও মুখোশ তৈরিতে পুরোদস্তুর সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। দিনরাত এক করে তারা নিজেদের আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন পেরেক আর হাতুড়ির টুংটাং শব্দের কর্মযজ্ঞে।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় সব’চে বড় প্রতিকৃতি হিসেবে রাখা হচ্ছে শান্তির প্রতীক ‘পায়রা’কে। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে তা নির্মাণের কাজও। আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৮
এইচএমএস/এমএ