ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মরাখালে পরিণত জয়পুরহাটের ৪ নদীতে হচ্ছে চাষাবাদ

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৮
মরাখালে পরিণত জয়পুরহাটের ৪ নদীতে হচ্ছে চাষাবাদ জয়পুরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদী এখন অস্তিত্ব হারা মরাখালে পরিণত হয়েছে। ছবি: বাংলানিউজ

জয়পুরহাট: সীমান্তবর্তী উত্তরের জেলা জয়পুরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ছোট যমুনা, তুলশীগঙ্গা, হারাবতি ও চিরি নদী এখন অস্তিত্ব হারা মরাখালে পরিণত হয়েছে।

যুগের পর যুগ এসব নদীতে খনন না করা ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এক সময়ে প্রমত্তা এসব নদীতে এখন ইরি-বোরা ধান, মিষ্টি আলুসহ গমের চাষাবাদ হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, এক সময় ছোট যমুনা ও তুলশীগঙ্গা নদীতে পাল তুলে নৌকা চলতো।

এসব নৌকা দিয়ে যাতয়াত করতো বড় বড় ব্যবসায়ীরা। তারা বিভিন্ন হাট বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করতো এসব নদী পথেই। এছাড়া স্থানীয় জেলে পরিবারের সদস্যরা একমাত্র নদীতে মাছ ধরেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো।  

অন্যদিকে, স্থানীয় কৃষকরা নদীর পানি দিয়েই চাষাবাদ করতো। বর্তমানে এসব নদীতে পানিতো নেই, উপরন্তু নাব্যতা হারিয়ে কোনো কোনো নদীর অস্তিত্ব এখন বিলীন হতে বসেছে।  

জানা যায়, দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে উৎপত্তি হয়ে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর ঘুরে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নওগাঁ জেলার আত্রাই নদীতে মিশেছে ছোট যমুনা নদী। এছাড়া ভারতে জন্ম নেওয়া চিরি নদী জেলার পাঁচবিবি উপজেলার কল্যাণপুর থেকে শুরু করে আক্কেলপুর পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটারের এ নদী এখন ৩০ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে। বাকি সব নদীর জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে চাষাবাদ করছেন। নদীগুলো খননের অভাবে এবং দখলের কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীর গতিপথ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে নদী পাড়ের চাষীরা তাদের পরিশ্রমের ফসল বন্যার পানিতে হারিয়ে ফেলছেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকশ্যাম গ্রামের জেলে নগেন, দোয়ানী গ্রামের সতিশ, উত্তর জয়পুর গ্রামের সুবিরসহ অনেকেই বাংলানিউজকে জানান, এ জেলার চারটি নদীর দৈন্যদশায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। এখন আমরা বাপ দাদার পেশা ছেড়ে ভ্যান রিকশা কিংবা অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করছি।

জয়পুরহাট সদরের কুঠিবাড়ী ব্রিজের বাসিন্দা হিরা, রাজু সরদার, মেশকাতসহ অনেক যুবক বাংলানিউজকে জানান, ছয় বছর আগেও এই নদীতে আমরা সাঁতার কেটে গোসল করতাম। কিন্তু আজ সেই নদীতে হাঁটু জলও নেই, আছে শুধু বালুচর।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী এলাকার ৫০ ঊর্ধ্বো বয়সী নারী আয়েশা বেওয়া বাংলানিউজকে বলেন, এই নদীর পানি দিয়ে গৃহকাজে সব ধরনের কাজ করা হতো। সেই সঙ্গে মানুষ ও গৃহপালিত পশুদের গোসল করানো হতো। কিন্তু এখন বালুচরের কারণে কিছুই হয়না। উপরন্তু প্রভাবশালীরা দখল করে নিচ্ছে নদীর পাড়গুলো।  

এক সময়ে এসব নদী দিয়ে নৌকায় নওগাঁর আত্রাই সহ দূর-দূরান্তের বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যবসা করতেন জয়পুরহাটের বাসিন্দা নাজেম উদ্দীন, সালেহ মোহাম্মদ, মোজাম্মেল আকন্দ, মুনির মণ্ডল, নাসির উদ্দীনসহ অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু নদীগুলো পানিশূন্য হওয়ায় তাদের সেই ব্যবসাও বন্ধ হয়েছে। এসব নদীতে পাল তোলা নৌকা যেন আজ তাদের কাছে শুধুই স্মৃতি।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনভারমেন্ট লয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (বেলা) প্রতিনিধি ও জয়পুরহাট এনজিও সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব সরকার বাংলানিউজকে বলেন, নদীগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ অতীব জরুরী। নদীগুলোর এসব করুণ পরিণতি দেখেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে না। এ অবস্থায় চলতে থাকলে কিছু দিন পরে বাকি দুটি নদীরও অবস্থা একই হবে।  

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, জয়পুরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা চারটি নদী রক্ষণাবেক্ষনের জন্য ১৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একনেকে পাশ হলে নদীগুলোকে আগের মতো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।