ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চোখের জলে পিয়াসকে বিদায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
চোখের জলে পিয়াসকে বিদায় পিয়াসের কফিন দেখেই কাঁদতে থাকেন শিক্ষক ও সহপাঠীরা। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: শেষবারের মতো বাকরুদ্ধ অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানালো পিয়াস রায়ের স্কুল জীবনের শিক্ষক ও সহপাঠীরা।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সকাল ৮টায় বরিশালের মরদেহবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে পিয়াসের মরদেহ আনা হয় বরিশাল জিলা স্কুলের মাঠে।

এর আগে রাত ৩টায় পিয়াসের মরদেহ বরিশালের গফুর লেনের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

এরপর থেকেই পিয়াসের মা-বাবাসহ স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পুরো এলাকা। কফিন জাপটে ধরে একমাত্র সন্তানকে বুকে আগলে রাখার মতো কাঁদতে থাকেন পিয়াসের মা পূর্ণা রানি রায়।

শোকাবহ সেই বাড়ি থেকে ধর্মীয় আচার পালন শেষে সকাল পৌঁনে ৮টার দিকে পিয়াসের স্কুলের দিকে রওয়ানা দেয় মরদেহবাহী গাড়িটি। স্কুলমাঠে গাড়িটি পৌঁছুলে কফিন দেখেই কাঁদতে থাকেন শিক্ষক ও সহপাঠীরা।

মরদেহবাহী গাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা হাতে হাতে কফিনটি নামিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যালয়ের প্যারেড গ্রাউন্ডে রাখেন। পরে সেখানে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান সহপাঠী ও শিক্ষকরা। পিয়াসের মরদেহ আনা হয় বরিশাল জিলা স্কুলের মাঠে। ছবি: বাংলানিউজমরদেহবাহী গাড়ির সঙ্গে পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায়ও আসেন ছেলের এ বিদ্যালয়টিতে। ছেলে হারানোর শোকে মুহ্যমান বাবা খানিক সময়ের জন্য সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাতারে এসে দাঁড়ান অশ্রুসজল নয়নে।

এ সময় পিয়াসের স্কুল জীবনের সহপাঠী ইভান বাংলানিউজকে জানান, পিয়াসের সঙ্গে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিলো। তার পড়াশোনার পাশাপাশি বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো দখল ছিলো। ২০১০ সালে পিয়াস বরিশাল জিলা স্কুল থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলতার সহিত ভালো ফলাফল অর্জন করেন।

অপর সহপাঠী সোয়েব বলেন, পিয়াসের এই মৃত্যুতে আমরা বন্ধুমহল কতোটা দুঃখ পেয়েছি তা বলে বোঝোতে পারবো না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পিয়াস সুন্দর আচার-ব্যবহারের অধিকারী ছিলো। সে এভাবে চলে যাবে ভাবতেই পারছিনা। আমরা তার এ মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বরিশালের শ্মাশানে নেওয়া হবে পিয়াস রায়ের মরদেহ। সেখানে পিয়াসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।  

১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিধ্বস্ত হলে পিয়াস রায়সহ ২৬ বাংলাদেশি, ২২ নেপালি ও ১ চীনা নাগরিক মারা যান। বরিশাল শহরের সুখেন্দু বিকাশ রায়ের সন্তান পিয়াস রায় এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শেষে নেপাল গিয়েছিলেন ঘুরতে।

গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র পিয়াস রায়ের মরদেহ নিয়ে বরিশালে বাড়িতে পৌঁছুলে তার বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার স্বপ্ন ছিলো  আমার পিয়াস ভালো একজন ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। কিন্তু সবই তো এখন স্বপ্ন। সরকারের কাছে আমার কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই, যা হারিয়েছি তা ফিরিয়ে দিতে কেউ পারবে না। কারো জানি সন্তান এমনভাবে হারাতে না হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad