ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ ত্রিভুবনে ৩৬ বছরে ৭০-এর অধিক দুর্ঘটনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৮
ঝুঁকিপূর্ণ ত্রিভুবনে ৩৬ বছরে ৭০-এর অধিক দুর্ঘটনা প্লেন বিধ্বস্ত

ঢাকা: ১৯৫৬ সালে উদ্বোধনের পর ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালিত হয় নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। উদ্বোধনের বছরই মে মাসে থাই এয়ারওয়েজের একটি প্লেন অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। তাতে ১শ’ জনের মতো যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন। এদের মধ্যে একজন নিহত হন। এরপর এ দুর্ঘটনার তালিকা শুধু বেড়েই চলেছে।

নেপালের স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, আর্ন্তজাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পর থেকে ৩৬ বছরে এখন পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে এ বিমানবন্দরে। এতে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৭শ’।

পাহাড় ঘেরা এই বিমানবন্দরটি কাঠমান্ডু উপত্যকায় এবং শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে।

একের পর এক দুর্ঘটনার ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোর একটি বলে মনে করা হয় ত্রিভুবনকে। সেখানে প্লেন ছাড়া হেলিকপ্টারও ভূপাতিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার ( ১২ মার্চ) বিকেলে ইউএস বাংলার প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার পর নেপালে প্লেন চলাচলে নিরাপত্তার দুর্বলতার বিষয়টি আবারও চোখে সামনে চলে এলো। নেপালে প্লেন চলাচল কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় অভিযোগের তীর বারবার তাদের দিকে গেছে।

ইউএস বাংলা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও কারণ হিসেবে সেখানকার বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের (এটিসি) গাফেলতিকে সন্দেহ করছে এয়ারলাইন্সটির কর্তৃপক্ষ।

এয়ারলাইন্সটির সিইও ইমরান আসিফ বলেন, বিমানবন্দরের এটিসি টাওয়ার সঙ্গে পাইলটের কথোপকথনের অডিও পেয়েছি। এ রেকর্ডবার্তা শুনলে আপনারা বুঝতে পারবেন, আমাদের ধারণা এটিসি টাওয়ারের ভুল নির্দেশনার কারণে প্লেন বিধ্বস্ত হয়েছে।

ত্রিভুবনে প্লেন দুর্ঘটনার তালিকা অনেক লম্বা। দেখা যায়, ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের একটি এয়ারবাস অবতরণ করার জন্যে বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১১৩ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন।

একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হয় আরো একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পিআইএর বিমানটি বিধ্বস্ত হলে বিমানের ভেতরে থাকা ১৬৭ জনের সবাই প্রাণ হারায়।

১৯৯৫ সালে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন বেষ্টনী ভেঙে মাঠের ভেতরে ঢুকে যায়। তাতে দু'জন নিহত হন।

লুফথানসার একটি বিমান এয়ারপোর্ট থেকে উড়ান শুরু করার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। তাতে পাঁচজন ক্র সদস্য নিহত হয়। এটি ঘটেছিলো ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে।

ওই একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নেকন এয়ারের একটি প্লেন ত্রিভুবন বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি টাওয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষে কাঠমান্ডু থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি অরণ্যে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১০ জন যাত্রী ও ৫ জন ক্রুর সবাই নিহত হন।

২০১১ সালে বুদ্ধ এয়ারের একটি বিমান বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় ১৯ জন আরোহীর মধ্যে একজন শুরুতে প্রাণে বাঁচতে সক্ষম হলেও পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মারা যান। বলা হয় খারাপ আবহাওয়া ও নিচুতে থাকা মেঘের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিলো।

২০১২ সালে সিতা এয়ারের একটি বিমান উড্ডয়নের পরপরই সম্ভবত একটি শকুনের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯ জন আরোহীর সবাই মারা যান।

২০১৫ সালে তুর্কী এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ঘন কুয়াশার মধ্যে নামতে গিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ে। ৩০ মিনিট ধরে এটি বিমানবন্দরের উপর উড়তে থাকে। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় নামতে পারলেও সেটি রানওয়ের থেকে ছিটকে মাঠের ঘাসের উপর চলে যায়। ২২৭ জন যাত্রীকে সেখান থেকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।

২০১৭ সালের মে মাসে সামিট এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন আর সর্বশেষ দুর্ঘটনার শিকার হলো ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেনটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৮
এমএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।