ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অশান্তি বাড়ছেই এরশাদের!

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১০
অশান্তি বাড়ছেই এরশাদের!

ঢাকা: অশান্তি বাড়ছে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের।

সাবেক এই প্রেসিডেন্ট যে প্রত্যাশা নিয়ে মহাজোটে যোগ দিয়েছিলেন তার কানাকড়িও পূরণ হয়নি।

বৃহস্পতিবার সপ্তম সংশোধনীর রায় ঘোষণার পর সার্বিক পরিস্থিতিই তার প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে দলীয় কোন্দলও প্রকট হচ্ছে দিনদিন। তার ওপর মাঝেমধ্যেই ঝামেলা পাকাচ্ছেন সাবেক স্ত্রী বিদিশা। সব মিলিয়ে এরশাদের অশান্তি দিন দিন বাড়ছেই।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, অশান্তিতে থাকার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না এরশাদের। কখন কার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
 
জানা গেছে, নির্বাচনী জোট হিসেবে মহাজোট গঠনকালে এরশাদের দাবি অনুযায়ী তাকে রাষ্ট্রপতি বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এছাড়াও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরসহ অন্তত তিন জনকে মন্ত্রীত্ব দেওয়ার।

নির্বাচনী মহাজোট যখন ক্ষমতার মহাজোটে পরিণত হয় তখন আশায় গুঁড়ে বালি পড়ে এরশাদের। রাষ্ট্রপতি হওয়া তো দূরের কথা জাতীয় পার্টি নেতাদের মধ্যে মন্ত্রীত্ব জুটেছে কেবল জিএম কাদেরের।

এরপর এরশাদ মধ্যপ্রাচ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর’ সুযোগ পাচ্ছেন বলে খবর ছড়াচ্ছিলেন খোদ এরশাদেরই ঘনিষ্টজনরা। কিন্তু ওই সম্ভাবনাও পরিণতি পায়নি।

বারবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েও শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের শিকে না ছেঁড়ায় অসন্তুষ্ট এরশাদ এক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলাই ছেড়ে দেন বলে খবর আছে দলীয় পরিম-লে।

কয়েক মাস ধরে কোনো অনুষ্ঠানে তাদেরকে আর এক সঙ্গে দেখা না যাওয়ায় মহাজোট নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে এরশাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। মাস ছ’য়েক আগে এক অনুষ্ঠানে হাসিনা ও এরশাদ একই অনুষ্ঠানের কাছাকাছি বসলেও তাদেরকে কথা বলতে দেখা যায়নি। মহাজোট সরকারের বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ পেলেও গনভবনে যাননি এরশাদ।

মহাজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে স্বপ্নভঙ্গের পাশাপাশি ঘরের সঙ্কটও কম নয়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে স্ত্রী রওশন ভীষণ অখুশি এরশাদের ওপর। চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা বিদেশে গেলেও এরশাদ একবারও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেননি রওশনকে। এ নিয়ে এরশাদ-রওশন বচসা হচ্ছে প্রায়ই।

বৃহস্পতিবার রায়ের পরপরই বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র পক্ষ থেকে এরশাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি ক্ষুব্ধস্বরেই বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি এখন কিছুই বলবো না। ’

তবে এর আগে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বিষয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, এ বিষয় এখনই আমি কথা বলতে চাই না। আগে রায় হোক তার পর কথা বলবো। তখন তিনি বলেন সমস্যা থাকবে, আবার তা কাটিয়ে উঠতে হবে। এ নিয়ে এখন ভাবছি না। দেখি কি হয়। দলে কোনো সমস্যা নেই। এখন দলকে সুসংগঠিত করা নিয়েই বেশি ভাবছি।

এদিকে, মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দিন দিন এরশাদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছেন বিদিশা। ইদানিং  সম্প্রতি সংসার ত্যাগী এক সাংবাদিকের সঙ্গে বিদিশার গড়ে উঠেছে গভীর শখ্য।   ক’মাস আগে ওই সাংবাদিককে লোক দিয়ে নাজেহালও করিয়েছিলেন এরশাদ। তবে কাজ হয়নি তাতে। এরশাদ এখনো কাতর বিদিশার জন্য। এ কারণে কারো সঙ্গে বিদিশার সখ্য স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না তিনি।  

এসব কিছুর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী জিএম কাদেরের মন্ত্রীত্ব হারানোর আশঙ্কা। ভাইয়ের বিরুদ্ধে সংসদীয় কমিটি ও বিমানের পরিচালনা পর্ষদের প্রকাশ্য অবস্থানও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাকে।

নির্বাচনী হলফনামায় ভুল তথ্যদান ও ঋণখেলাপী হওয়ার কারণে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী নাসরিন জাহান, সাতীরা-৪ আসনের এইচএম গোলাম রেজা ও টাঙ্গাইল-৫ আসনের আবুল কাশেমের সংসদ সদস্য পদ রক্ষা নিয়েও  সমস্যা তৈরি হয়েছে।

উপরন্তু সপ্তম ও পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের কারণে গণ-মামলার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় বাকি জীবন জেলে কাটানোর আশঙ্কাও অস্থির করে তুলছে এরশাদকে।

পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনার পরিপ্রেেিত ‘মার্শাল ল’ জারি করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় মতা দখলের পথ চিরতরে বন্ধ করতে মৃত্যুদ-ের বিধান রাখার কথা ভাবছে সরকার। সংবিধান সংশোধনে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে গঠিত উচ মতাসম্পন্ন বিশেষ কমিটি গত ২৯ জুলাই তাদের প্রথম বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেছে। শেষ পযর্ন্ত সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে এমন বিধান যোগ হলে একমাত্র জীবিত সামরিক শাসক হিসেবে এরশাদকেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে এরশাদ বেশ অস্বস্তিতে ভুগছেন বলেও জানা গেছে।

তবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘দলে কোনো সমস্যা নেই। জাতীয় পার্টি নেতারা সত্য ও ন্যায়ের পথেই আছেন। সুতারাং এ দলের ভবিষ্যাৎ ভাল। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ আগস্ট ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।