ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাতেও নারীদের নিরাপদ কর্মস্থল অগমেডিক্স

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০১ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৮
রাতেও নারীদের নিরাপদ কর্মস্থল অগমেডিক্স বাংলাদেশি তরুণীরা রাত জেগে দেশে বসেই কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের সঙ্গে

'সন্ধ্যার পর মেয়েদের ঘরের বাইরে থাকা মানা'- এ ধারণা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছি আমরা। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের নারীরাও দিনরাত সমানতালে কাজ করছেন। এক সন্ধ্যায় এমন দৃশ্যই চোখে পড়লো অগমেডিক্সে, যেখানে বাংলাদেশি তরুণীরা রাত জেগে দেশে বসেই কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের সঙ্গে।
 
 

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অগমেডিক্স। গুগল গ্লাস প্রযুক্তি এবং প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করছে।

চিকিৎসকেরা যুক্তরাষ্ট্রে বসে রোগী দেখেন। আর হাজার মাইল দূরের দেশ বাংলাদেশে বসে তরুণ-তরুণীরা তাদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন, যাকে বলা হয় 'স্ক্রাইব'। স্ক্রাইবরা রোগীর তথ্য লিপিবদ্ধ করা এবং প্রেসক্রিপশন তৈরিতে সহায়তা করেন।  

দুই দেশের সময়ের ব্যবধান। সেখানে চিকিৎসকেরা যখন রোগী দেখতে শুরু করেন, তখন বাংলাদেশে সন্ধ্যা নামে। রোগী দেখা শেষ হতে হতে আমাদের দেশে রাত গড়িয়ে সকাল হতে শুরু করে। আর তাই স্ক্রাইবদেরও কাজের শুরুটা হয় সন্ধ্যায়, শেষ হয় মাঝরাত বা ভোরের দিকে।

রাতের বেলায় বেশিরভাগ কাজ। শুধু ছেলেরাই করবে এমনটা নয়। অগমেডিক্সে দেখা গেলো অনেক মেয়েরাও কাজ করছেন। কথা হয় ট্যালেন্ট অ্যান্ড কালচার স্পেশালিস্ট সাবরিনা আহমেদের সঙ্গে। চাকরি শুরুর গল্পটা তিনি বললেন এভাবেই, ‘২০১৫ সাল। সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি। ইন্টারভিউ দিতে এলাম অগমেডিক্সে। এক পর্যায়ে এইচআর থেকে জানতে চাওয়া হলো, আমরা যেহেতু ইউএস টাইম জোনে কাজ করি, তাই রাতে কাজ করতে হবে। এতে আপনার কোন সমস্যা নেই তো?’ একটু ইতস্তত হয়ে বললাম, আমার একটু বাসায় কথা বলতে হবে।  

শুধু কথা নয়, পরদিন মা-বাবাসহ এসে হাজির হলাম অফিসে। কী কাজ হবে, রাতে বাসায় কিভাবে পৌঁছাবো, কোনো সমস্যা হবে কি-না সব জানলেন। সব ভেবেচিন্তে কিছুটা আশংকা আর অনিশ্চয়তা নিয়ে তারা সায় দিলেন। তখন থেকে অগমেডিক্সে আমার যাত্রা শুরু। আজ তিন বছর পর সেই আমিই অন্য মেয়েদের এখানে চাকরির জন্য উৎসাহিত করি। ’ 

স্ক্রাইব ট্রেইনার সাহারা জেবিন বলছিলেন, ‘প্রথম দিকে কিছুটা দ্বিধা কাজ করতো। আস্তে আস্তে এই জড়তা কেটে গেছে। আমি মনে করি, আমি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি। ’

শুধু স্ক্রাইব নয়, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। রিক্রুটমেন্ট স্পেশালিস্ট হৃদি রেজা বলেন, ‘রাতের বেলা কাজ শুনে অনেক মেয়েই প্রথমে বিচলিত হয়েছে, কিন্তু অনেক ধৈর্য্য ধরে এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে তাদের বিশ্বাস অর্জন করা গেছে। ’

রাতে কাজের নিরাপত্তা আর নারীদের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে স্ক্রাইব হিসেবে কর্মরত সাদিয়া আমরিন জানান, ‘রাতে কাজ শেষের পর সবাইকে পৌঁছে দেয়ার জন্য অগমেডিক্সের নিজস্ব গাড়ি আছে। সেখানে বিশেষভাবে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। গাড়িগুলো প্রত্যেক মেয়েদের তাদের বাসার গেইটে পৌঁছে দেয়। তাছাড়া আমাদের অফিসেই প্রত্যেকের জন্য লাঞ্চ-ডিনার এবং স্ন্যাকসের ব্যবস্থা আছে। কারো বাইরে যাওয়ার তেমন প্রয়োজন পরে না। পুরো অফিসই সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে। তাই নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ের কিছুই নেই। ’

‘অগমেডিক্সে কাজের পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার। এখানে প্রত্যেকের জন্য নিরাপদ আর মজার এক পরিবেশ তৈরি করা হয়। একটি মেয়ের রাতে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যাতায়াতের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে তার আর প্রতিবন্ধকতা থাকে বলে মনে হয় না। ’ বলছিলেন স্ক্রাইব কাজী ফারিয়া।  

অগমেডিক্সের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং সাইট লিডার রাশেদ মুজিব নোমান বলেন, ‘আমাদের দেশে মেয়েরা মেধা, যোগ্যতা কোনো দিকেই পিছিয়ে নেই। এখন প্রয়োজন শুধু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। রাতে মেয়েরা কাজ করতে পারবে না, এই ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশের কয়েক লাখ তরুণী যেখানে বিপিও খাতে কাজ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে, সেখানে কেবল সামাজিকতার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে গৃহবন্দি করে রাখার কোনো মানে হয় না। অগমেডিক্সে আমরা প্রচুর মেয়েদের কাজের সুযোগ করে দিতে চাই। ’

নারীদের অগমেডিক্সে কাজের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষার ফলাফল নয়, মেধা এবং ইচ্ছাশক্তির উপর ভিত্তি করেই আমরা নিয়োগ দিয়ে থাকি। যোগ্যতা থাকলে এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে নিরাপদ কর্মস্থল অগমেডিক্সের ভুবনে তোমাদের স্বাগতম...। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৮

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।