ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আজ ২৬ আগস্ট, ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১০
আজ ২৬ আগস্ট, ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস

দিনাজপুর: আজ বৃহস্পতিবার ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী ট্রাজেডির ৪র্থ বর্ষপূর্তি। ২০০৬ সালের এই দিনে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল এবং বিদেশী কোম্পানি এশিয়া এনার্জির দেশ ত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী জনতার উপর পুলিশ ও বিডিআর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে।

এ ঘটনায়  সরকারী হিসাবে ৩ জন এবং বেসরকারী হিসাবে ৬ জন নিহত হন। এসময় সংঘর্ষে আহত হন ৩ শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ  হন ৫০ জন।

২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রা জাতীয় কমিটির পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফুলবাড়ীর এশিয়া এনার্জি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিকেল ৩টায় উপজেলার ঢাকা মোড়ে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। অপরদিকে সভাস্থলে জনগণের আগমন ঠেকাতে পুলিশ দিনাজপুরের মোহনপুর, বিরামপুর, পার্বতীপুর, বড়পুকুরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়।
 
প্রতিবাদে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রতিবাদী জনতা। তারা ঢাকা মোড়ের সমাবেশ শেষে শ্লোগান মুখর এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এশিয়া এনার্জি কোম্পানির অফিসের দিকে এগুতে থাকলে বিডিআর ও পুলিশ নিমতলা মোড়ে তাদের বাধা দেয়। পরে ফুলবাড়ী ছোট যমুনা নদীর ব্রীজে বিডিআর ও পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। কিন্তু প্রতিবাদী জনতা এতেও পিছু না হটলে প্রথমে টিয়ার শেল ও পরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু হয় তাদের ওপর।

পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফুলবাড়ী চাঁদপাড়া গ্রামের তরিকুল ইসলাম (২২), বারকোনা গ্রামের শিশু আমিন (১০) ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ঝড়ারপাড় গ্রামের ছালেকিন (১৫)সহ আরো ৩ আন্দোলনকারী নিহত হন এবং অন্তত ৫০ জন আন্দোলনকারী আহত হন।

এ ঘটনার পরের দিন ২৭ আগস্ট ফুলবাড়ীতে আন্দোলনকারী সর্বস্তরের জনতা প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারীরা গাছের গুড়ি দিয়ে রেল পথ ও সড়ক পথ বন্ধ করে দেয়। সারা দেশের সঙ্গে ফুলবাড়ীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অচল হয়ে পড়ে ফুলবাড়ী।   প্রশাসন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে।

এদিন বিডিআর ও পুলিশ কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সকাল থেকেই মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ফুলবাড়ী শহর। শহরের সমস্ত দোকানপাট, ব্যাংক-বীমা, অফিস আদালতের বন্ধ হয়ে যায়।

২৮ আগস্ট সকালে বিডিআর প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এক পর্যায়ে বিুব্ধ জনতা এশিয়া এনার্জির পরে লোকজনের বাড়িতে ও অফিসে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা এশিয়া এনার্জির ওয়্যার হাউজ, ৪টি প্রদর্শনী বিল্ডিং ও ওভার হেড পানির ট্যাংক ভাংচুর করে এবং ইট ও লোহার বড় লুটপাট করে নিয়ে যায়।

২৯ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের উপ-মন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু ও রাজশাহী সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এমপি জাতীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনার জন্য দিনাজপুরে আসেন। কিন্তু সেদিন কোনও আলোচনা হয় না।

পরদিন ৩০ আগস্ট জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মতে পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ৩ ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে এশিয়া এনার্জীকে প্রত্যাহার, হতাহতদের তিপুরণসহ ৬ দফা সমঝোতা চুক্তি স্বার হয়।

৬ দফা চুক্তি করার পর আন্দোলনের সমাপ্তি হয়। সেই থেকে এই দিনটিকে ফুলবাড়ী ফুলবাড়ী ট্রাজেডী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

ফুলবাড়ী আন্দোলন কমিটির অন্যতম নেতা সাইফুল ইসলাম জুয়েল জানান, দিবসটি স্মরনে ফুলবাড়ী রা কমিটি স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিক্রমে কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, সকালে শোক র‌্যালি ও অস্থায়ী স্মৃতি স্তম্ভে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি পালন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad