ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

৩৯ বছরে রাবিতে রাজনৈতিক সহিংসতার বলি ২৯ জন

শরীফ সুমন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১০
৩৯ বছরে রাবিতে রাজনৈতিক সহিংসতার বলি ২৯ জন

রাজশাহী: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গত ৩৯ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এ পর্যন্ত ৬২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ এসব রাজনৈতিক সহিংসতায় ঝরে গছে ২৯ টি তাজা প্রাণ।

এছাড়া আহত হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি। এদের মধ্যে ২৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সংঘর্ষের পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থেকেছে প্রায় ছয়শ’ দিন। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক শাখা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানায়, এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, বিভিন্ন সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, হল দখল ও টেন্ডারবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৬২ টি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে ৮টি।

বিভিন্ন সময়ে সংঘঠিত এসব সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ২৭ জনই রাবি ছাত্র। বাকি দু’জনের একজন বহিরাগত অপরজন রিক্সাচালক।

নিহতদের মধ্যে পনেরো জন ছাত্রশিবিরের, চারজন ছাত্রদলের, পাঁচজন ছাত্রলীগের, দুইজন ছাত্র মৈত্রী এবং একজন ছাত্র ইউনিয়নের। বিভিন্ন সংঘর্ষে আহত দুই সহস্রাধিক ছাত্রের মধ্যে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন শতাধিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন, আসবাবপত্র ও গাড়ি ভাংচুর এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে অসংখ্যবার। এছাড়া সংঘর্ষের সময় বিভিন্ন আবাসিক হলের অনেক ক গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

প্রাণহানির উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো

রাবির রক্তক্ষয়ী ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ মারা যান জাসদ ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াসির আরাফাত পিটু। ১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান।

ওই বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক হলের সামনে খুন হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রমৈত্রী নেতা জুবায়ের হোসেন রিমু। এরপর খুন হন ছাত্রমৈত্রী নেতা রুপম ভট্টাচার্য, ছাত্রলীগ নেতা মঞ্জুর এলাহী। এরা সবাই নিহত হন ছাত্রশিবিরের হামলায়।

অপরদিকে গত বছরের ১৩ মার্চ নিহত হন শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে শিবিরের নৃশংস হামলায় গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন নিহত হন। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে।

সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ইফতারির টোকেন ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে বিরোধের জের ধরে মারাত্মক আহত হন ছাত্রলীগ কর্মী নাসরুল্লাহ ওরফে নাসিম। ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাসিম গত ২৩ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় সংঘটিত এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগেরই এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু ‘ইতিপূর্বে ক্যাম্পাসে সহিংস ঘটনাসহ হতাহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না’ বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাস অনির্ধারিত বন্ধ থাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।  

বর্তমানে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।