ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রদ্ধার বিপরীত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
শ্রদ্ধার বিপরীত ফুল নিয়ে ফিরে যাচ্ছে অনাবিল। ছবি: আদনান শফিক

স্থান কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা। স্থানীয় সাংবাদিক আদনান শফিক ভাষা শহীদ‌দের শ্রদ্ধা জানা‌তে পুত্র অনা‌বিলকে নি‌য়ে একুশের সকা‌লে ক‌লেজের শহীদ মিনা‌রে যান। গি‌য়ে দে‌খেন, শ্রদ্ধার বিপরীতে চলছে অবমাননা।

আদনান  বললেন, ‘গিয়ে দেখি, শহীদ মিনার নয়, যেন এক বিশৃঙ্খলার রাজ্য। দেখার কেউ নেই।

কেউ একজন ফুল দি‌চ্ছে, অম‌নি ছোঁ মে‌রে নি‌য়ে যা‌চ্ছে ছে‌লে‌ ছোকরার দল। ছেলেমেয়েরা জুতাপা‌য়ে শহীদ মিনা‌রে মে‌তে উ‌ঠেছে সেল‌ফির উন্মাদনায়। দাঁ‌ড়ি‌য়ে এসবই দেখছিলাম আর ভাব‌ছিলাম, মূল্য‌বোধ ও চেতনাহীন অনুষ্ঠানসর্বস্ব একুশ পালন ক‌রে কী পাব আমরা!’

ফুল দেওয়ার কো‌নো প‌রি‌বেশ না পে‌য়ে হতাশমনে বাসায় ফি‌রে আসেন সাংবাদিকপিতা ও পুত্র অনাবিল।

একুশের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে আবেগ ও উৎসবমুখরতার পাশাপাশি শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভাবগাম্ভীর্য থাকার কথা। ভাষাশহীদদের বীরোচিত আত্মত্যাগের ঘটনার সঙ্গে বেদনা ও স্মরণের স্বিগ্ধতা জড়িত। আনন্দ-উৎসব, হৈচৈ, উত্তেজনার মাধ্যমে একুশের চেতনাকে অবমাননা কখনোই কাম্য হতে পারে না।

আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর পালন ও উদযাপন শ্রদ্ধার সঙ্গে না করা হলে পুরো আয়োজনের অন্তর্নিহিত মূল্য ও তাৎপর্যটাই খেলো হয়ে যায়। এমন চিত্রও আমাদের দেখতে হয়, যা শ্রদ্ধার বিপরীত। শুধু শহীদ মিনারে উচ্ছৃঙ্খলার পাশাপাশি শহীদবেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের সময় চলে তুমুল হট্টগোল। সারাবছরই শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধায়, অবহেলায় জর্জরিত করাও হয়। একুশের চেতনা ও ভাষা আন্দোলনের মর্মের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকার নাম শ্রদ্ধা ও সম্মান হতে পারে না।

ছেলে ছোকরাদের দখলে শহীদ মিনার।  ছবি:  আদনান শফিক

একদা আশি ও নব্বুই দশকে শহীদ মিনারে শক্তির মহড়া হয়েছে।  কলুষিত হয়েছে একুশের চেতনা ও ভাবাদর্শ। সে অবস্থা পাড়ি দিয়ে এসেছি আমরা। এখন আবার যদি অসম্মান ও অশ্রদ্ধা মাথাচাড়া দেয়, তবে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা, জুতাপায়ে বেদিতে হাঁটাহাঁটি, পুষ্পার্ঘ্যের অবমাননা, জটলা ও ধস্তাধস্তির মতো কার্যকলাপ মেনে নেওয়া যায় না।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ কলেজের শহীদ মিনারে অবমাননাকর পরিস্থিতি যাতে না হয় সেজন্য সেখানে উপজেলা ও কলেজ প্রশাসনের লোকদের থাকার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ তখন সেখানে ছিলেন না। থাকলে এসব হতো না। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।  তা না হলে একুশের মহা লগ্নেও এমন অশ্রদ্ধা, অবমাননা চলতেই থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮

এমপি / জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।