ঢাকা: ঈদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে অগ্রিম টিকিট পেতে রাজধানীর আসাদগেট, কলেজগেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলীর বিভিন্ন বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে মানুষের উপচেপড়া ভিড়।
বুধবার থেকেই আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন বাস কাউন্টার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আসাদগেটের হানিফ পরিবহনের টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে ভোর ছয়টা থেকেই ছিল উপচেপড়া ভিড়।
কাউন্টারের ম্যানেজার মো. ফিরোজ আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে বলেন, ‘ভোর ছয়টা থেকেই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ’
দেশের উত্তর ও দণি-পশ্চিমাঞ্চলের রুটগুলোতে সেপ্টেম্বরের ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ তারিখের আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
হানিফ পরিবহনের কলেজগেট কাউন্টার থেকে খুলনা, যশোর, বগুড়া, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর, শিবগঞ্জ, কানসাট, ফুলবাড়ি, ভুরুঙ্গামারীসহ প্রায় ২০টি জেলার টিকেট এবং কল্যাণপুর কাউন্টার থেকে কুষ্টিয়ার টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘মালিকের নির্দেশে সিট থাকা পর্যন্ত আমরা তা বিক্রি করছি। ঈদের সময় কোনো সিট বুক বা ফাঁকা রাখা হবে না। ’
আগাম টিকিট কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সকাল ছয়টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। দশটা বেজে গেল, এখন পর্যন্ত টিকিট কিনতে পারিনি। ’
তবে যারা আরও সকালে এসেছে, তারা টিকিট নিয়ে এরই মধ্যে চলে গেছে বলে জানান তিনি।
অনেকেই যাত্রী সেজে টিকিট কিনে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেইসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকার বিনিময়ে অন্যের জন্য টিকিট কিনে দেওয়া এবং আগে থেকে বুক করে রাখা টিকিট লাইনের পাশ থেকে টাকা জমা দিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ করেন।
তবে ম্যানেজার মো. ফিরোজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘টিকিট বিক্রিতে কোনো অনাকাক্সিত ঘটনা এড়াতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ’
তবে ম্যানেজার এ রকম দাবি করলেও তাকে কাউন্টারের পিছনের কক্ষে তাস খেলতে দেখা যায় এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কাউকেই কাউন্টারের সামনে দেখা যায়নি বলে প্রতিবেদক নিজে দেখেছেন।
শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টার ম্যানেজার জিএম পারভেজ মাহামুদ বলেন, ‘আমরা সকাল সাড়ে সাতটার দিকে টিকিট বিক্রি শুরু করেছি। ’
শ্যামলীর কল্যাণপুর, আসাদগেট ও সোহরাব ফিলিং স্টেশন কাউন্টার থেকে নওগাঁ, রাজশাহী, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, রংপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, লালমনিরহাট এবং পাবনাসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০টি রুটের টিকিট দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কল্যাণপুর কাউন্টারে বগুড়ার টিকিট কিনতে আসা নির্মাণ সংস্থা অ্যাসেট ডেভেলপমেন্টের কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি দামে টিকেট বিক্রি হলেও সরকার নির্ধারিত দামের বেশি নেওয়া হচ্ছে না।
তবে কালোবাজারিরা যাত্রীর ছদ্মবেশে ৫০টাকা বেশি দিলে টিকিট দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার অভিযোগের প্রমাণ মেলে যখন সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কালোবাজারীরা সটকে পড়ে।
আল-হামরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে ঈদের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ’
উত্তরবঙ্গের বগুড়া, নওঁগা, রংপুরসহ প্রায় ৭টি জেলা রুটে সেপ্টেম্বর ৫, ৬,৭ ও ৮ তারিখের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘কাউকে তিনটির বেশি টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। ’
তবে গাবতলী বাস টার্মিনালে টিকিট সংগ্রহে ভিড় একটু কম দেখা গেছে। কারণ গাবতলীর বেশিরভাগ কাউন্টারে টিকিট বিক্রি এখনও শুরু হয়নি।
বেশ কিছু কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু কাউন্টারে সন্ধ্যার পর আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। তবে বেশিরভাগ কাউন্টারে ২৭ আগস্ট থেকে আগাম টিকেট বিক্রির নোটিশ ঝুলতে দেখা যায়।
টিকিট কালোবাজারি রোধে বাংলাদেশ বাস ট্রাক মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ৩০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে বলে জানান সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মো. সালাউদ্দিন।
টিকিট কালোবাজারি ও অনাকাক্সিত ঘটনা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তারাও টার্মিনাল চত্বরে দায়িত্ব পালন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫ , ২০১০