ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রায় বৃহস্পতিবার: ৭ম সংশোধনী অবৈধ হলেই কাঠগড়ায় যাবেন এরশাদ

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১০
রায় বৃহস্পতিবার: ৭ম সংশোধনী অবৈধ হলেই কাঠগড়ায় যাবেন এরশাদ

ঢাকা: সপ্তম সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের রায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার। এই রায়ের উপরই নির্ভর করছে সাবেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণের বৈধতা।

রায়ে সপ্তম সংশোধনী অবৈধ হলেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।  

এদিকে, বুধবার ওই রিটের শুনানিতে এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেছেন, প্রচলিত ফৌজদারি আইনেই তার বিচার হওয়া উচিত।     

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে সপ্তম সংশোধনীর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এ রিটের শুনানি শেষ হয়েছে বুধবার।

এর আগে শুনানিতে আদালত সরকারপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের কাছে জানতে চান, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে বলা হয়েছে সামরিক শাসকদের শাস্তি হওয়া উচিত, আপনি কী মনে করেন?

জবাবে এম কে রহমান বলেন, ‘এরশাদের ক্ষমতা দখল সংসদে বৈধতা পেয়েছিল। এই বৈধতা দেওয়াটাও অবৈধ। এরশাদ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ’

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলা আছে। ১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক। এই অনুচ্ছেদে নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার কথাও বলা আছে। সামরিক আইন জারির কোনো বিধান সংবিধানে নেই। সামরিক আইন সংসদে পাস হতে পারে না। ’

‘এরশাদ সংবিধানকে তোয়াক্কা না করে সামরিক শাসন জারি, সংবিধান স্থগিত এবং প্রধান সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। এসবই ছিল অবৈধ এবং বেআইনি। যে মুর্হূত থেকে তিনি ক্ষমতা দখল করেছেন, সেই মুহূর্ত থেকে ক্ষমতা গ্রহণ অবৈধ’, বলেন তিনি।

ওই রিটে সামরিক আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে বলে বাংলানউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ।  

যে কারণে রিট দায়ের
১৯৮৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর চট্রগ্রামে জনৈক আবু তাহেরের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্ত করে এটি হত্যা মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নূরুল আনোয়ার, সিদ্দিক আহমেদ এবং নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। মামলাটি চট্রগ্রামের দায়রা আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এক সামরিক ফরমান বলে মামলাটি সামরিক আদালতে স্থানান্তর করা হয়। পরে আসামিদের অনুপস্থিতিতে তাদের যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়।

একজন সাধারণ নাগরিকের মামলা কেন সামরিক আাদালতে হবে- এ মর্মে অভিযুক্ত সিদ্দিক আহমেদ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কারা অন্তরীণ থাকা অবস্থায় হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটে তিনি উল্লেখ করেন, সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এরশাদের জারি করা সব সামরিক ফরমান ও আদেশকে এবং এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারের বেঞ্চ সপ্তম সংশোধনী কেন অবৈধ ও বেআইনি এবং সংবিধান পরিপন্থি হবে না- এ মর্মে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে রিটকারী সিদ্দিক আহমেদকেও জামিন দেন।

বৃহস্পতিবার ওই রিটেরই চূড়ান্ত রায় দেবেন আদালত।

রিটকারীর আইনজীবী হাসান এস আজিম শুনানিতে বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী এরশাদের শাস্তি হওয়া উচিত। এরশাদের ক্ষমতা দখল, একে বৈধতা দেওয়া সংবিধানের মৌলিক পরিপন্থি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।