ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদ সামনে রেখে থুথু,ধাক্কা ও অজ্ঞান পার্টি বেপরোয়া

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১০
ঈদ সামনে রেখে থুথু,ধাক্কা ও অজ্ঞান পার্টি বেপরোয়া

ঢাকা: বরাবরের মতো এবারও ঈদ সামনে রেখে তৎপর হয়ে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতারক চক্র। থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টি ও অজ্ঞান পার্টি নামে পরিচিত এসব চক্রের দুর্বৃত্তরা দৌরাত্ম্য বাড়িয়েছে।

তাদের খপ্পরে পড়ে টাকা-পয়সা খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শারীরিক ঝুঁকি এবং জীবনহানির ঘটনাও ঘটছে।

বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, সায়দাবাদ, মহাখালী, গাবতলী, গুলিস্তান, ফার্মগেট, মালিবাগ ও মগবাজারসহ প্রায় ৩০টি স্পটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তরা। মওকা পেলেই চড়াও হচ্ছে শিকারের ওপর। টাকা-পয়সা, মূল্যবান সম্পদÑযা-ই পাচ্ছে হাতিয়ে নিচ্ছে।

পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, জুলাই ও আগস্টে অভিযান চালিয়ে থুথু পার্টির ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

মতিঝিল থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এই চক্রের সদস্যরা প্রথমে কোনো নিরীহ পথচারীকে টার্গেট করে তার শরীরে থুথু ছিটিয়ে দেয়। এ নিয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে ওই পথচারীর উপর একযোগে হামলা চালিয়ে চক্রের সদস্যরা টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কখনও কখনও গণপিটুনির শিকারও হতে হয়।

ঈদ উপলে থুথু পার্টিতে যোগ দিচ্ছে নতুন নতুন সদস্য। তারা এখন আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে মাঠে নেমেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীতে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দেওয়া মোল্লা রনি, কালু ও মিজান এখন এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে সাবের আলীর নেতৃত্বে। সাবের আলী এর আগে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

মহাখালীতে শুরু হয়েছে নতুন উপদ্রব। এখানকার ধাক্কা পার্টির দৌরাত্ম্যে ঢাকায় নতুন আগতরা নিয়মিতই পড়ছেন বিপদে। এখানকার সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী আলেক।

পথচলা মানুষকে অযথা ধাক্কা দিয়ে বা নিজেরাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে প্রথমে বাদানুবাদ এবং পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটায় এ চক্রের সদস্যরা। অন্য সহযোগীরা এসে ‘মীমাংসার নামে’ ওই পথচারীকে মহাখালী কাঁচাবাজারসংলগ্ন গলিতে নিয়ে গিয়ে সবকিছু লুটে নেয়।

গুলশান থানার ওসি কামাল উদ্দিন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, গত মাসে গুলশান থানাপুলিশ ধাক্কা পার্টির সদস্যদের ধরতে দফায় দফায় অভিযান চালালে তারা এ এলাকা থেকে সটকে পড়ে।

এখন ওই চক্রের দৌরাত্ম্য নেই বলে দাবি করেন তিনি।

অথচ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীরা বলছেন উল্টোটা। তাদের অভিযোগ, এখানে ধাক্কা পার্টির দৌরাত্ম্য একটুও কমেনি, বরং ঈদ উপলক্ষে দিনদিন তা বেড়েই চলেছে। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও উত্তরাঞ্চল থেকে আসা গরিব ও সহজ-সরল যাত্রীরাই তাদের খপ্পরে পড়ছে বেশি।

তবে সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে অজ্ঞান পার্টি। দূরপাল্লার যাত্রীদের খাবারে কৌশলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় এ চক্র। কিছুণের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়া যাত্রীকে হাসাপাতালে নেওয়ার নাম করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে।

সম্প্রতি, গাবতলী-আরিচা রুট, মহাখালী-টাঙ্গাইল ও সায়দাবাদ-কুমিল্লা রুটে এই চক্রের তৎপরতা মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে। প্রতিটি টার্মিনালে ১৫/১৬ জনের সংঘবদ্ধ গ্রুপ এ অপকর্ম করে চলেছে।

অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর পরিবহণ শ্রমিকের সহায়তা পাচ্ছে অজ্ঞান পার্টি। গত তিন মাসে রাজধানীতে অন্তত ২৮ জন অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে টাকা-পয়সা খুইয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার এ কে এম শহিদুল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘ঈদের আগে রাজধানীতে সব শ্রেণীর দুর্বৃত্ত ও প্রতারকচক্রের নানা পাঁয়তারা চলে। তবে এবার এদের বিরুদ্ধে পুলিশের গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা তৎপর। গুরুত্বপূর্ণ মোড়, মার্কেট ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে কোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাশাপাশি চলছে র‌্যাবের অভিযান ও সতর্ক নজরদারি। ’

এবার ঈদপূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রাখছে বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের স্থানীয় সময়: ১৭:০০ ঘন্টা, ২৫ আগস্ট, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad