ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাফলার পেঁচিয়ে খুন, ইট বেঁধে লেকে ফেলা হয় মরদেহ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
মাফলার পেঁচিয়ে খুন, ইট বেঁধে লেকে ফেলা হয় মরদেহ জিসান

ঢাকা: রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় একটি রিকশা গ্যারেজের মালিক মোফাজ্জল হোসেনের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় জিসান (১৩)। মেধাবী জিসান কিছুদিন আগেই নতুন বছরে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। গত ১৯ তারিখ এলাকার পূর্ব পরিচিত দুই যুবক জিসানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে।

কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অপহরণকারীদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি মোফাজ্জল। এরপর ২২ তারিখ আফতাবনগর এলাকার একটি লেক থেকে জিসানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দিনভর অভিযান চালিয়ে রাজধানী এবং গাইবান্ধা থেকে মূল পরিকল্পনাকারীসহ জিসানের দুই হত্যাকারীকে আটক করে র‌্যাব-৩। আটককৃতরা হলেন- মো. শাহিন (১৯) ও  শরিফুল ইসলাম (২২)। আটককৃতদের প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের কথা।

র‌্যাব জানায়, জিসানকে অপহরণের পর তার বাবার কাছে কয়েক দফা মুক্তিপণের টাকা দাবি করতে থাকে অপহরণকারীরা। কিন্তু টাকা পেতে দেরি হওয়ায় ১৯ জানুয়ারি আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে জিসানকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় শাহিন। পরিকল্পনা অনুযায়ী জিসানের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহের সঙ্গে ইট বেঁধে আফতাব নগর লেকে ডুবিয়ে দেয় অপহরণকারীরা।

জিসানের বাবা মোফাজ্জল হোসেন জানান, খিলগাঁও সিপাহীবাগের ২৫২/৩ নম্বর বাসায় পরিবারসহ বসবাস করতেন তারা। জিসান সিপাহীবাগ ইন্টারন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণিতে পড়তো। গত ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে নিখোঁজের পর অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

তখন জিসানের মোবাইল থেকে তার বাবার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে। যাতে লেখা ছিল, ‘তোর ছেলে অপহরণ হয়েছে। ১৫ লাখ টাকা নিয়ে কুমিল্লা রেলস্টেশনে আসবি। ’ টাকা দিতে রাজি হলেও সন্ধ্যা থেকে অপহরণকারীদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছিলেন না মোফাজ্জল। পরদিন ২০ জানুয়ারি সকালে খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

২২ জানুয়ারি বিকেলে আফতাব নগরের লোহার ব্রিজের পাশের লেক থেকে জিসানের মরদেহ উদ্ধার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। পরদিন ২৩ জানুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে এসে জিসানের মরদেহ শনাক্ত করেন মোফাজ্জল।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দিনগত রাতে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পর র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তৎপরতা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকা থেকে শরিফুল ইসলামকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গাইবান্ধার ফুলছড়ি এলাকা থেকে শাহিনকে আটক করা হয়। শাহিনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নিহত জিসানের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। যে ফোন থেকে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আটক দুইজনই হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে শুধুই অর্থ আদায় নাকি অন্য কারণ ছিল বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করছি। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে, পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। উদ্ধার হওয়া জিসানের মোবাইল ফোনটিও তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮

পিএম/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।