ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যমুনার পানিতে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত হবে, ভিন্নমত বিশেষজ্ঞদের

ইশতিয়াক হুসাইন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১০
যমুনার পানিতে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত হবে, ভিন্নমত বিশেষজ্ঞদের

ঢাকা: যমুনা নদীর পানি এনে বুড়িগঙ্গা নদীর সব বর্জ্য ফ্ল্যাশ করে মেঘনায় ফেলে দেওয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত হয়েছে। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী ২০১৩ সালের মধ্যে পুরোপুরি দূষণ মুক্ত হবে বুড়িগঙ্গা।

সেই সঙ্গে এর প্রবাহ বাড়বে বলেও দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)।

তবে এ প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, এভাবে নদী দূষণ কমানোর উদ্যোগ সফল হতে পারে না। পরিবেশ আইন কার্যকরের মাধ্যমেই দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

যমুনার পানি এনে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর সব বর্জ্য ফ্ল্যাশ করে সরিয়ে মেঘনায় ফেলতে এরই মধ্যে সরকার ‘অগমেন্টেশন অব বুড়িগঙ্গা’স ফ্লো বাই রেস্টোরিং সিল্টেড আপ লিংকস অব যমুনা’ প্রকল্প পাস করেছে।

প্রকল্প অনুযায়ী, পাউবো যমুনা নদী থেকে পানি এনে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর পানি প্রবাহ বাড়াবে। নদীগুলোতে পানি সরবরাহ বাড়ালে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করছে পাউবো।

পাউবোর চিফ মনিটরিং অফিসার প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী ২০১৩ সালের মধ্যে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত হবে। প্রকল্পটি নদীর বর্জ্য সরাতে খুবই উপযোগী। ’

বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নদী দূষণ বন্ধের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলবে। কিন্তু বর্তমানে বুড়িগঙ্গা ও এর আশপাশের নদীগুলোর যে অবস্থা তাতে এই প্রকল্পের বিকল্প নেই। ’

পাউবো সূত্র জানায়, যমুনা থেকে পানি এনে বুড়িগঙ্গার দূষণ কমানো ও প্রবাহ বাড়ানোর এ প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৪-৫ অর্থবছরে। পরবর্তী কালে প্রকল্পটি ঝুলে যায়। শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি পাস হয়েছে।

পাউবোর এক কর্মকর্তা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী টাঙ্গাইল অঞ্চলের যমুনা থেকে পানি প্রথমে তুরাগ হয়ে বুড়িগঙ্গা ও পরে বালু নদী হয়ে শীতলক্ষ্যায় নেওয়া হবে। এজন্য যমুনার উৎসমুখে বড় ধরনের খননকাজ চালাতে হবে। এছাড়া খননকাজ চালাতে হবে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগেও।

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ ইনামুল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে দূষণ দূর হবে না। ’

এর নানাবিধ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এর ফলে প্রথমত রাজধানীর উজানে সাভার ও ধামরাইয়ের দূষণ ঢাকায় আসবে এবং ঢাকার দূষণ মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে যাবে। ’

‘দূষণ প্রতিরোধে একমাত্র করণীয় হচ্ছে শিল্পে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন’, বলেন ড. ইনামুল।

তিনি বলেন, ‘শিল্পের অপরিশোধিত বর্জ্যরে কারণে নদী দূষণ বাড়ছে। এটা ঠেকাতে সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ’

ড. ইনামুল আরও বলেন, ‘বর্তমানে রাজধানীর জলাভূমি ও নদীগুলো বর্জ্য শোধনের ‘স্ট্যাবিলাইজেশন পন্ড’ হিসেবে কাজ করছে। এখানে নতুন করে আর কোনো বর্জ্য না পড়লে এক বছরে মধ্যে এমনিতেই এগুলো মাটি ও বাতাসে মিশে যাবে। ’

তার মতে, ১৯৯৫ সালের পরিবেশ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করলেই নদী দূষণ কমবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৭ এবং ১৯৯৯ সালে পর পর দুবার গড়াই নদী খনন করা হয়। তারপরেও শীর্ণ নদী শীর্ণই রয়ে গেছে। বরং নদী তীরবর্তী এলাকার বহু মানুষ নদী খননের কারণে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। এলাকাগুলোর  বেশিরভাগ নলকূপে এখন আর পানি উঠছে না।

ড. ইনামুল হক বলেন, যমুনা নদী থেকে ঢাকায় পানি আনতে হলে টাঙ্গাইলের পুংলী নদী প্রায় ১০০ কিলোমিটার খনন করতে হবে। নদী খননের সময় নদীবক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ বালি উত্তোলিত হবে। এ বালু আশপাশের কৃষিজমিতে গিয়ে পড়বে। ফলে কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।