ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাজারো সমস্যা আর জোড়াতালির নাম তেজগাঁও রেল স্টেশন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
হাজারো সমস্যা আর জোড়াতালির নাম তেজগাঁও রেল স্টেশন! তেজগা৥ও রেল স্টেশনের বেহাল দশা/ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: রাজধানী ঢাকাতে রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে পাঁচটি। এদের মধ্যে কমলাপুর ও বিমানবন্দর এই দু’টি রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের চাপ থাকে সব সময় বেশি। তবে এই দু’টি স্টেশনের পরে যে রেল স্টেশনটিতে যাত্রীদের চাপ সব থেকে বেশি থাকে সেটি হলো তেজগাঁও রেল স্টেশন। 

 

প্রতিদিনই মেইল ট্রেন ও কমিউটার ট্রেনে হাজার হাজার যাত্রীর আসা যাওয়ার গন্তব্যস্থল তেজগাঁও রেল স্টেশন। বলতে গেলে যাত্রীসেবার কোনো ব্যবস্থাই এখানে নেই।

পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা না থাকা ও পরিবেশ যাত্রীবান্ধব না হবার কারণও অনেক। অপরিচ্ছন্ন ঘিনঘিনে পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা ও মাদকের সমস্যাসহ এখানে রয়েছে নানা সমস্যা। আর এসবের মধ্যেই জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে খুঁড়িয়ে চলছে রাজধানী ঢাকার বুকের মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনটি। এ যেন বাতির নিচে অন্ধকার।  

স্টেশন কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না অংশত পর্যাপ্ত লোকবল ও ব্যবস্থাপনার অভাবে, অংশত সব কিছু তাদের ক্ষমতার আওতার মধ্যে নেই বলে। স্টেশনটি সচল রাখতে একেকজন কর্মকর্তাকে করতে হচ্ছে একাধিক বিভাগের কাজ।

...রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখে, এখানে কর্মরত কর্মকর্তা, যাত্রী এবং আশেপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব ধারণা ও তথ্য পাওয়া যায়।

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে স্টেশনটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদ খালি পড়ে আছে। এসব পদে গত তিন বছরে রেল মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগের কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি।

তেজগাঁ রেলওয়ে স্টেশন সূত্র অনুযায়ী স্টেশনে কার্যত স্টেশন মাস্টার প্রয়োজন ৪ জন। আছেন মাত্র ৩ জন। পয়েন্টসম্যান দরকার ১২ জন। আছেন মাত্র ৫ জন। সহকারী ইয়ার্ড মাস্টার (গ্রেড-২) প্রয়োজন ২ জন কিন্তু আছেন ১ জন। ইয়ার্ড ফোরম্যান প্রয়োজন ৬জন। অথচ নেই একজনও। বুকিং সহকারী প্রয়োজন ৬ জন। কিন্তু আছেন মাত্র ৩ জন। স্টেশনটিতে পার্সেল সহকারী প্রয়োজন ৩ জন। কিন্তু গত তিন বছরে এই পদে  কাউকেই নিয়োগ দেয়া হয়নি।

স্টেশনের এরিয়ার ভিতরে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বস্তি। রাজধানীর একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন তেজগাঁও যার নিজস্ব এলাকায় অবৈধভাবে অবাধে গড়ে উঠেছে বস্তি। এসব বস্তি নিয়ন্ত্রণ করছেন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা।

এছাড়া লোকবলের অভাব থাকার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে স্টেশনের সাফ-সাফাইয়ের কাজ। স্টেশনের নানা প্রান্তে জমে রয়েছে ময়লা ও আবর্জনার স্তূপ। যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করার কারণেও স্টেশন এলাকায় একটি অস্বাস্থ্যকর, অসহনীয় ও উৎকট পরিবেশ বিরাজ করছে।

স্টেশনটি ঘিরে রয়েছে আরও কিছু অভিযোগ। রাত হলেই তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় মাদক সেবনকারী ও মাদক বিক্রেতদাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়।  

এছাড়া অনেক যাত্রী ও স্টেশনের আশপাশের অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করছেন, স্টেশনের থামিয়ে রাখা বিভিন্ন মালগাড়ির ভেতরে রাতভর চলে মাদক সেবন ও বিক্রি।  

...স্টেশনে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গাফলতি ও রেল স্টেশনের পাশের বস্তির জন্য স্টেশন ও আশপাশের এলাকায় মাদকের এমন ছড়াছড়ি। বস্তিটিতে বসবাসকারী অনেক যুবক রেলওয়ে স্টেশনের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে যোগসাজস করে এই মাদক সেবন ও ব্যবসা চালায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের সার্বিক নেতিবাচক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলানিউজ কথা বলে স্টেশন মাস্টার (গ্রেড-১) এমএ আজিজের সঙ্গে। স্টেশনের নাজুক, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ও যাত্রীসেবার নিম্নমানের কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। এজন্য তিনি মূলত লোকবলের অভাবকেই দায়ী করেন।  

তিনি বলেন, আমাদের স্টেশনে লোকবলের অভাব রয়েছে। লোকবলের অভাবের কারণে যাত্রীদের আমরা ঠিকভাবে টিকিটসেবাটুকু পর্যন্ত দিতে পারছি না। কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে স্টেশনটি চালাতে হচ্ছে।

...স্টেশন এলাকায় মাদক সেবন ও কেনাবেচার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্টেশন এলাকায় মাদক সেবন ও কেনাবেচা হয় এমন খবর আমাদের কানেও আসে। কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনী যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে তাহলে তো এমন হবেই! এছাড়া এজন্য দায়ী যে আশপাশের বস্তি, সেগুলো উচ্ছেদের ক্ষমতাও তো আমাদের হাতে নেই বলেই চলে।

স্টেশনটির সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর স্টপেজ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, বিমানবন্দর স্টেশনের মতো এই স্টেশনেও আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজের ব্যবস্থা করা হলে এসব ট্রেনে ওঠা-নামার জন্য এখানকার বাসিন্দাদের বিমানবন্দর বা কমলাপুরে দৌড়ঝাঁপ করার ভোগান্তি পোহাতে হয় না। এখানে স্টপেজের ব্যবস্থা করা হলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমে স্বস্তি বাড়বে। রেলের যাত্রীবান্ধব ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এমএসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।