ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি হাসপাতালে ঠাঁই হলো শতবর্ষী মনতাজ আলীর  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
সরকারি হাসপাতালে ঠাঁই হলো শতবর্ষী মনতাজ আলীর   হাসপাতালে ঠাঁই পাওয়া বৃদ্ধ

নাটোর: স্ত্রী-সন্তান সবাই রয়েছে। তবুও ঠাঁই নিতে হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। বৃদ্ধ হওয়াটাই যেন শতবর্ষী মনতাজ আলীর সবচেয়ে বড় অপরাধ। ঘর-সংসার, ছেলে-মেয়ে সব থাকার পরও তার জোটে না কোনো খাবার। নেই কোনো আশ্রয়। বৃদ্ধ হওয়ায় মনতাজ আলীর ঠাঁই হয়নি পরিবারের কাছে। 

সোমবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে সিংড়া থানা গেটের সামনে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধ মনতাজকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে সিংড়া হাসপাতালে ভর্তি করেছেন পুলিশ ও মানবাধিকার কর্মীরা।  

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিন ভর কেউ ওই বৃদ্ধের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি পরিবারের লোকজন।



হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ মনতাজ আলী বাংলানিউজকে জানান, বৃদ্ধ হওয়ায় স্ত্রী ও ৫ ছেলে-মেয়ে কেউ আর তার দায়িত্ব নিতে চায় না। বোঝা মনে করে তারা রাস্তায় ফেলে চলে গেছে। বড় ছেলে আব্দুল আজিজ মরুর নিংগইন পেট্রোল পাম্পের পার্শ্বে খাবারের হোটেল আছে। সেখানে খাবারের কোনো অভাব নেই। তবুও তার ঠাঁই হয়নি সেখানে।  
বৃদ্ধের প্রতিবেশি ছবেজান বেওয়া ও হাসিনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, শহরের চাঁদপুর এলাকায় ওই বৃদ্ধ তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে সিংড়া শহরের স্থানীয় বাংলালিংক মোবাইল টাওয়ারের পাশে শতবর্ষী এই বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পরে তারা মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলে ভ্যান যোগে বড় ছেলে আব্দুল আজিজ মরুর বাড়িতে নিয়ে যান।  
 

সেখানে কেউ তাকে আশ্রয় দিতে চায় না। মরুর ছেলে শুভ হোসেন তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। পরে বৃদ্ধের মেয়ে মোমেনা বেগম ও মেজো ছেলে মোস্তাকের বাড়িতে নিয়ে গেলেও তারা কেউ ঘর থেকে বের হননি। পরে রাত ৮টায় ওই বৃদ্ধকে সিংড়া থানার গেটে ফেলে রেখে চম্পট দেয় ভাড়া করা ভ্যান চালক।  
 
খবর পেয়ে সিংড়া থানার উপ-পরিদর্শক শাহেদ আলী ও স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী সাইফুল ইসলাম অসুস্থ শতবর্ষী মনতাজ আলীকে উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। থানা থেকে রাতেই ওই বৃদ্ধের ছেলেদেরকে খবর দেওয়া হলেও তারা হাসপাতালে দেখা করতে আসেনি।
 
হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীরা জানান, দিনভর কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। হাসপাতাল ও রোগীদের দেওয়া খাবার থেকেই তার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য রোগীরাও তাকে খেতে দিয়েছেন।
 
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স মনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে জানান, এই বৃদ্ধের আত্মীয় স্বজনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেই। চিকিৎসার সেবার পাশাপাশি সকালে হাসপাতাল থেকে একটি রুটি, কলা ও ডিম দেওয়া হয়েছে।
 
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, একজন শতবর্ষী বৃদ্ধকে রাতে রাস্তায় ফেলে চলে যাওয়া অমানবিক বিষয়। ওই বৃদ্ধের ৪ ছেলেকে থানায় দেখা করার জন্য খবর পাঠানো হয়েছে। তারা না আসায় পুলিশও পাঠানো হয় তার ছেলেদের ঠিকানায়। কিন্তু পাওয়া যায়নি। তারা তার বাবার দায়িত্ব না নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।