ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেট অঞ্চলে লোকাল ট্রেনে বিনা টিকিটের যাত্রীর ভিড়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৭
সিলেট অঞ্চলে লোকাল ট্রেনে বিনা টিকিটের যাত্রীর ভিড় টিকেট কাটার গরজ নেই লোকাল ট্রেনে, টিকেটধারীরা যাচ্ছে দাঁড়িয়ে, টিকেটহীনরা বসে; ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ঢাকা টু সিলেট,চট্রগ্রাম টু সিলেট এবং আখাউড়া টু সিলেট লাইনে সুরমা মেইল, জালালাবাদ একপ্রেস ট্রেইন, কুশিয়ারা এক্সপ্রেস এবং ডেমু ট্রেন নামে কয়েকটি ট্রেন চলাচল করে। সাধারণত স্বল্প আয়ের লোকরাই এসব ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন। এসব ট্রেনে বেড়েছে বিনা টিকিটের যাত্রী। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

এ বিষয়ে নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনও তদারকি। টিটিই’র স্বল্পতার সুযোগে জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) টিকেটহীন যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া ও জরিমানা আদায় করে তা নিজেদের পকেটে পুরছে।

ঢাকা টু সিলেট এবং সিলেট টু ঢাকা সুরমা মেইল ট্রেনটি ৯ আপ এবং ১০ ডাউন, চট্রগ্রাম টু সিলেট জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১৩ আপ এবং ১৪ ডাউন, আখাউড়া টু সিলেট কুশিয়ারা এক্সপ্রেস ট্রেন ১৭ আপ এবং ১৮ ডাউন এবং আখাউড়া টু সিলেট ডেমু ট্রেনটি ৯৩ আপ এবং ৯৩ ডাউন নামে চলাচল করে।

প্রতিদিন এসব ট্রেনে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও খুব কম সংখ্যকই টিকেট কাটেন। এসব ট্রেনের বিনা টিকেটর যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানা ও টাকা করে রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও ট্রেইন টিকেট এক্সামিনাররা (টিটিই)। সে টাকা রেলওয়ের কোষাগারে জমা পড়ে না। পড়ে জিআরপি ও টিটিইদের পকেটে।

জিআরপির দায়িত্ব রেলের নিরাপত্তার দেখভাল করা। কিন্তু তাদেরকে এখন অনেক সময় টিটিইর দায়িত্বে নেমে পড়তে দেখা যায়। যা নিয়মবহির্ভূত। অনেক সময় চালকরাও টাকার বিনিময়ে ইঞ্জিনে লোক ও লাকড়ি বহন করেন বলে  অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ট্রেনগুলোতে স্টাফের সন্তান বা স্টাফ পরিচয় দিয়ে লোকজনকে হয়রানি করতেও দেখা গেছে। সব মিলিয়ে লেঅকাল ট্রেনগুলো হয়ে উঠেছে যাবতীয় নৈরাজ্যের আখড়া।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, টিটিইর সংখ্যা ও রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে জনবল কম থাকার কারণে এমন হচ্ছে। লোকস্বল্পতার কারণে যথাযথ চেকিং ও তদারকি করা সম্ভব হয় না। ট্রেনগুলোতে টিকেট চেকিংয়ের জন্য ১৪ জন করে টিটিই প্রয়োজন সেখানে আছে ৫ জন। তাছাড়া লোকাল ট্রেনগুলোতে যাত্রী কম হয় বলে সেগুলোর দিকে ততোটা নজর দেওয়া হয় না। রেলওয়ের সব সুনজর পায় ইন্টারসিটি ট্রেনগুলো। এ সুযোগে লোকাল ট্রেনে যেমন নেই কোনো যাত্রীসেবা তেমনি নেই কোনো তদারকি ও শৃঙ্খলা।

লোকাল ট্রেনগুলোর বিনা টিকেটের যাত্রীদের কয়েকজনকে টিকেট না করার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তারা সরাসরি জবাব দেন: ‘টিকেট তো লাগে না! জিআরপি ও টিটিই এলে তাদের সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই হয়ে যায়। এসব ট্রেনে যারা টিকেট করেন, উল্টো তারা পড়েন দুর্ভোগে। দেখা যায়, টিকেটধারী যাত্রীদের অনেকেই বসতে না পেরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন আর যারা টিকেট করেননি তারা সিটে বসে বা ঘুমিয়ে যাচ্ছেন।

লোকাল ট্রেনগুলোতে টিটিই অনেক সময় থাকেই না। সে সুবাদে জিআরপি টিকেট চেকিং করে টাকা নিয়ে যায়। অনেক সময় অবশ্য টিকেট না থাকা যাত্রীরা স্টেশনগুলোতে নামার পর রেলের লোকদের হাতে হয়রানির শিকার হন।

হরষপুর থেকে সিলেট যাবার উদ্দেশ্যে ট্রেনে ওঠেন মো: তানবির নামে একজন যাত্রী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টিকেট না করে গাড়িতে ওঠার পর জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) এসে তার কাছ থেকে ১শত টাকা নিয়ে গেছে টিকেট দেবে বলে। কিন্তু তাকে কোনও টিকেট দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, জিআরপি’ই টিকেট চেক করছিল, যাদের টিকেট নেই তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে।

জয়রুন বিবি, রুপন মালাকার, আহাদুল ইসলামসহ অনেকে যাত্রী বাংলানিউজকে জানান, টিটিই গাড়িতে টাকা নেয়, এজন্য তারা টিকেট করেননি। টিকেট না কেটে টিটিইকে টাকা দিয়ে দিলে টাকা বাঁচে। ২০ টাকার জায়গায় ১০ টাকা দিয়ে ভ্রমণ করা যায়।

শমসেরনগর থেকে মনুতে যাচ্ছেন হাজিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা: হোসেন আহমদ। শিক্ষিত লোক হয়েও তিনি টিকেট করেননি। তাকে জিজ্ঞেস করতে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সামান্য কিছু পথ তাই টিকেট করেননি।

স্টেশন মাস্টার সাহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, লোকাল ট্রেনে টিকেট বিক্রির হার খুবই কম। ট্রেনগুলোতে চেকিং বাড়ালে জনগণ টিকেট ক্রয় করবে।

জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক আশরাফ হোসেন ও সহকারী চালক মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তারা নিজেরা ইঞ্জিনে লোক বা মালামাল তোলেন না। লোকজনই জোর করে উঠে পড়ে। উঠতে না দিলে তেড়ে মারতে আসে।

১৩ নং আপ জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) মিজানুর রহমান জিআরপি কর্তৃক বিনা টিকেটের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, অনেক সময় রাতের ট্রেনগুলোতে টিটিই থাকে না। এসুযোগে জিআরপি যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেয়। জিআরপি টাকা নেয় বলে অভিযোগ থাকলেও কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করে না বলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না।

গাড়ির ইঞ্জিনে লোক ও মালামাল বহনের বিষয়ে তিনি বলেন লাকড়ি পরিবহনের জন্য অনেক সময় স্থানীয় নেতাদের সুপারিশ থাকে।

তিনি ইঞ্জিনে লোক ওঠার অভিযোগ অস্বীকার করলেও সরেজমিনে দেখা গেছে ইঞ্জিনে অনেক লোক।

রেলওয়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (বাণিজ্যিক) নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লোক স্বল্পতার জন্য লোকাল ট্রেনগুলোতে টিটিই দেয়া যাচ্ছে না। ইন্টারসিটি ট্রেনগুলোতে টিটিই দিলে সেখান থেকে প্রতিদিন প্রচুর অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা হয়। অন্যদিকে লোকাল ট্রেনগুলোতে যাত্রী কম থাকাতে সেখান থেকে টাকা আদায় হয় সামান্য।
তিনি জানান, টিটিই নিয়োগের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আবু বকর ছিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, জিআরপি পুলিশ টিকেট চেক করার কথা না। তারা যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। টিটিই বা টিসি সাহায্য চাইলেই শুধু তাদেরকে সাহায্য করা হয়।
তিনি আরও বলেন, জিআরপি পুলিশের কোনও লোক যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেলে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। জিআরপি পুলিশে তিনি নতুন এখনো রেলের সব বিষয় তার এখনো জানা হয়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশ সময়:১৩৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৭
এম এ এইচ/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।