ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খাদ্য সঙ্কট ঝুঁকি: নানামুখী উদ্যোগ সরকারের

এমএকে জিলানী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১০
খাদ্য সঙ্কট ঝুঁকি: নানামুখী উদ্যোগ সরকারের

ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি, বাজার অস্থিতিশীল এবং অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় এবার দেশে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে।

অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরুণ দেব মিত্র স্বাক্ষরিত এক পত্রে গত সপ্তাহে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।



এরই মধ্যে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় নানামুখী পরিকল্পনাও নিতে শুরু করেছে সরকার।

চিঠিতে খাদ্য মজুদে ঘাটতি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম চাল সংগ্রহ এবং রাশিয়া থেকে নির্ধারিত পরিমান গম না পাওয়াকে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কটের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বরুণ দেব মন্ত্রিসভা কমিটিকে দেওয়া পত্রে বলেন, ‘সরকারি খাতে খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় বর্তমান বছরের একই সময়ে খাদ্য মজুদের পরিমাণ অনেক কম। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে চলতি মৌসুমে ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৪ দশমিক ৬৬ লাখ মেট্রিক টন পাওয়া গেছে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা খোলা বাজারে চালের মূল্য বেশি থাকায় বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। ’

এছাড়াও, রাশিয়া থেকে জি টু জি পর্যায়ে (সরকার থেকে সরকার পর্যায়) ৩ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির বিষয়টি চ’ড়ান্ত করার পর তারা এক লাখ মেট্রিক টন সরবরাহ দিতে রাজি হয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।  

রাশিয়াতে চলতি মৌসুমে খরা ও নজিরবিহীন তাপ প্রবাহের কারণে গমের উৎপাদন কম হওয়ায় দেশটি গমসহ সকল খাদ্যশস্য রপ্তানী নিষিদ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এর ফলে রাশিয়া থেকে গম পাওয়া যাবে না।

খাদ্য সচিব তার পত্রে সুপারিশ করে বলেন, ‘সন্তোষজনক খাদ্য নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে চাল সংগ্রহের একান্ত আবশ্যকতা রয়েছে বলে খাদ্য বিভাগ দৃঢ়মত পোষণ করে। ’

তবে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কট ঠেকাতে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানার জন্য খাদ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘বর্তমানে সরকারের ভান্ডারে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন চাল ও ৫৯ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন গম মজুদ রয়েছে যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিকটন কম। ’
 
তবে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেন তিনি।

আহমদ হোসেন বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা অনুযায়ী, কমবেশি ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ থাকতে হয়। বর্তমানে এর কম পরিমাণ খাদ্য মজুদ থাকলেও সঙ্কট হওয়ার কোনো কারণ নেই। মজুদ বাড়াতে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খাদ্য সঙ্কট হবে না। ’

তিনি জানান, ‘সঙ্কট ঠেকাতে এরই মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন চাল (আতপ), ভারত থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল ও দুই লাখ মেট্রিক টন গম সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে কেনা হচ্ছে। এছাড়া আরো আড়াই লাখ চাল আমদানির চুক্তি শেষ হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আরও প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন চাল কেনা হবে। ’

সূত্র জানায়, জরুরি প্রয়োজন মেটাতেই ভিয়েতনাম থেকে চাল কেনা হচ্ছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিএ) ২০০৬ এর ৬৮ ধারা এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রেজুলেশনস (পিপিআর) ২০০৮ এর ৭৬ (২) ধারা অনুসারে চাল কেনা হবে।

উল্লেখ্য, পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮ ধারায় বলা আছে, ‘সরকার রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে বা বিপর্যয়কর কোনো ঘটনা মোকাবেলার জন্য জনস্বার্থে সরকার কর্তৃক গঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সুপারিশক্রমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয় কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। ’

স্থানীয় সময় : ১৬৫৫ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট, ২০১০।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।