ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ইডেন কলেজের নির্বাচিত সহ-সভাপতি(ভিপি) ছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কেটেছে।
জেলখানায় বাবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের সময় অনেক রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনা। দলের খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছেন নেতাদের কাছে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগনেত্রী হিসেবে ১১-দফা আন্দোলনে, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত শেখ হাসিনার উপর আসে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেবার গুরুদায়িত্ব। তার সফল দূরদর্শী ও আপসহীন নেতৃত্বের সুবাদেই আওয়ামী লীগ তিন তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়েছে।
গত কয়েক বছরে যেমনটি হয়েছে, তেমনি এবারও জন্মদিনে শেখ হাসিনা দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন।
গত ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিবছরই শেখ হাসিনার জন্মদিন কেটেছে দেশের বাইরে। প্রতিবছরই সেপ্টেম্বরের এই নির্ধারিত সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রেই তাকে থাকতে হয়।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রণ্ট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ(বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কারাবন্দি বাবা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকচক্রের হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলেন। এরপর জার্মানি থেকে ভারতে এসে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে থাকেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক চ্যালেঞ্জিং জীবন। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে।
আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বারবার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। তাকে লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলি ছোড়া হয়েছে, বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
সেইসঙ্গে তিনি সয়েছেন জেল-জুলুম। ২০০৭ সালে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পোরা হয়েছিল।
টানা ৩৭ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই সময় দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্রমশ হয়ে ওঠেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ১৯৮৬ সালে, ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালের সংসদে তিনি বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্রপরিচালনায় সফলতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা পুরস্কারে যেমন, তেমনি বিভিন্ন সম্মানসুচক ডিগ্রিতে ভুষিত হন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক কর্মব্যস্ত জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭
এসকে/জেএম