ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

১০ টাকা সের যেন চাল লাগে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
১০ টাকা সের যেন চাল লাগে! দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আব্দুল মান্নান। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা। পাশেই বগুড়া ডাকবিভাগ। ডাকবিভাগের প্রধান ফটক লাগোয়া রয়েছে কয়েকটি চা-স্টল। এসব চা-স্টল ঘিরে সব সময় কমবেশি নানা শ্রেণি পেশার মানুষের আনাগোনা থাকে। প্রত্যহ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা আর চা পান।  

তখন ভর দুপুর। রফিকুল ইসলামের চা-স্টলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

তার গলায় সূতোয় বাঁধা এক খণ্ড কাগজের টুকরো ঝুলছিলো। সেখানে তার পুরো ঠিকানা ও অসহায় এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে সহায়তা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ার‌ম্যানের স্বাক্ষর রয়েছে সেই কাগজে।

 
প্রতিবন্ধী এই ব্যক্তি চা-স্টলের পাশে দাঁড়ানো দু’জন ব্যক্তির কাছে এক কাপ চা পানের আবেদন জানালেন। সঙ্গে সঙ্গে তার আবেদন মঞ্জুর। তাদের মধ্যে একজন চা বিক্রেতাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে এক কাপ চা ও একটি বিস্কুট দিতে বললেন। চা পানের পর দু’হাত উপরে তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই ব্যক্তিসহ পুরো দেশবাসির জন্য দোয়া করেন।
 
এসময় তিনি বলেন, ‘১শ’ টাকা কেজি যেন ইলশা (ইলিশ) মাছ লাগে। ১শ’ টাকা কেজি যেন গরুর গোস্ত লাগে। ১০ টাকা সের যেন চাল লাগে। আটা যেন পাঁচ টাকা সের লাগে। ১৫০ টাকা করে যেন প্রতিবস্তা ইউরিয়া সার লাগে। শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী), খালেদা জিয়া (বিএনপির চেয়ারপারসন) ও জাতীয়পার্টিসহ আমরা সবাই যেন মিলেমিশে থাকি। তবে সবাই আমরা ভাল থাকবো ....’।
 
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই ব্যক্তির নাম আব্দুল মান্নান। বাবা শফি উদ্দিন সর্দার। মা ছকিনা বেওয়া। তবে অনেক আগেই মারা গেছেন বাবা। মা বেঁচে থাকলেও তার মত চেয়ে চিন্তে জীবিকা নির্বাহ করেন। বগুড়ার কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়নের পাবহার গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
 
চা পানের ফাঁকে ফাঁকে আলাপচারিতায় আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, স্ত্রী জিন্নাতুন ও ছেলে জেলহজ নিয়ে তার সংসার। তিন শতক জায়গা কিনে সেখানে ঝুপড়ি ঘর বানিয়েছেন তিনি। সমিতি থেকে কিস্তির ওপর টাকা নিয়ে ওই জায়গা কেনেন তিনি। সেই টাকা পরিশোধ করতে চরম বেগ পেতে হয়েছে। খেয়ে না খেয়ে তাকে কিস্তির টাকা গুণতে হয়েছে। এসব বলতে বলতে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।    
 
তিনি আরো জানান, কয়েক বছর আগে স্ত্রী তাকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বার ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু সে এখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছে। এ অবস্থায় পেটের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে একাই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভিক্ষে করেন। সেই ভিক্ষের টাকায় চলে তার অভাব-অনটনের সংসার।
 
এরমধ্যে ছেলে জেলহজ কাহালু হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তারও লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়। অনেক ঘুরে ঘুরে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পেয়েছেন আব্দুল মান্নান। এক্ষেত্রে এলাকার মেম্বার বা চেয়ারম্যানের কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি তিনি। এ থেকে তিন মাস অন্তর অন্তর ১৮০০ টাকা ভাতা পান। দিন শেষে চিয়েচিন্তে বড়জোর ২০০-২৫০ টাকা সংগ্রহ হয়। এ দিয়ে চলে তার সংসার।
 
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আব্দুল মান্নান জানান, এ জীবনে অনেক দিনরাত অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাতে হয়েছে। এখনো কাটাতে হয়। এরপরও বেঁচে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করছেন। তবে চালের বাড়তি দামে চরম বেকায়দায় পড়েছেন প্রতিবন্ধী আব্দুল মান্নান।
 
সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে যে টাকা সংগ্রহ হয় তা অনেক দিন চাল কিনতেই শেষ হয়ে যায়। সেদিন আর অন্য কোন কিছু বাজার করা হয়ে ওঠে না। ওইদিন ঘরে কাঁচা বাজার না থাকলে উপোষ থাকতে বাধ্য হন তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।