ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিশেষ বরাদ্দে জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে বিধবা ভাতা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা ছাড়া মিলছে না বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা।

আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের দরিদ্র, অতিদরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ২০১৬/১৭ অর্থ বছরের বিশেষ বরাদ্দের আওতায় আনতে ৬ হাজার ৫২৬ জনকে মনোনীত করা হয়। যার মধ্যে বয়স্ক ২ হাজার ২৬১ জন, বিধবা ২ হাজার ৭৩ জন ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ২ হাজার ১৯২ জনকে নির্বাচন করা হয়।

বয়স্ক ও বিধবাদের প্রতি মাসে ৫শ’ টাকা হারে ও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে প্রতি মাসে ৬শ’ টাকা হারে তিন মাস পর এ টাকা বিতরণ করা হবে।

ভাতাভোগী ও স্থানীয়রা জানান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভাতা ভোগীর তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ৫শ’ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত টাকা গুণতে হয়েছে ভাতা ভোগীদের। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক অতিদরিদ্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও বিধবা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। আবার টাকার বিনিময়ে জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা ও মৃত ব্যক্তিও ভাতার জন্য মনোনীত হয়েছেন।

সব থেকে বেশি অনিয়ম মহিষখোচা ও কমলাবাড়ি ইউনিয়নে। মহিষখোচা ইউনিয়ন সমাজকর্মী আব্দুল ওহাব টাকার বিনিময়ে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে এসব ভাতা ভোগীর তালিকা প্রণয়ন করছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ভাতা ভোগীদের বই নিজ বাড়িতে টাকার বিনিময়ে বিতরণ করেন তিনি। সেক্ষেত্রে বই প্রতি ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ টাকা দিয়ে তিনি আলিসান বাড়ি তৈরি করেছেন।

টাকার বিনিময়ে জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে তার প্রতিবেশী চাচী রাবেয়া বেগমকে বিধবা ভাতার জন্য মনোনীত করেছেন। শুধু রাবেয়া নন, ওই ইউনিয়নের বিধবা ভাতা তালিকার এক নম্বর ওয়ার্ডের তারামিনা বেগম, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ওশনা বেগম, জাহানুর বেগম, ছকিনা বেগমকে বিধবা হিসেবে বলা হলেও তারা স্বামীসহ এক ঘরেই বসবাস করছেন। নয় নম্বর ওয়ার্ডের হাছমা বেগম ও চার নম্বর ওয়ার্ডের বাচ্চা বুড়ির নামে বিধবা ভাতা এবং তাদের স্বামীর নামে রয়েছে বয়স্ক ভাতা। এতেই শেষ নয় বেশ কিছু মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে বয়স্ক ভাতার তালিকায়। এসব সুবিধা ভোগীর তালিকা সমাজকর্মী আব্দুল ওহাব নিজেই তৈরি, যাচাই-বাচাই ও বই বিতরণ করেছেন।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক মহিষখোচা ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভাতা ভোগী বাংলানিউজকে জানান, টাকা ছাড়া ওহাবের সঙ্গে কথাই বলা যায় না। বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে চাহিদামতো টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে বই। টাকার বিষয় কাউকে বললে নাম কেটে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

আত্মীয়তা ও টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মহিষখোচা ইউনিয়ন সমাজকর্মী আব্দুল ওহাব বাংলানিউজকে বলেন, অফিসারের সঙ্গে কথা বলে বাড়িতে কিছু বই বিতরণ করা হয়েছে। যাদের স্বামী জীবিত রয়েছে তাদের নাম বাদ যাবে। ১৯ বছরের চাকরি জীবনের  টাকায় আলিসান বাড়িটি তৈরি করেছেন বলে জানান তিনি।

মহিষখোচা ইউনিয়নের সদস্য আব্দুল হামিজ বাংলানিউজকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় না করে ওহাব নিজেই এসব তালিকা করেছেন। তিনি ভুলে ভরা তালিকা যাচাই-বাচাই করে প্রকৃত বঞ্চিতদের অন্তভুক্তির দাবি জানান।

একই অবস্থা কমলাবাড়ি ইউনিয়নের ভাতা ভোগীদের। তাদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে নেয়া হচ্ছে বই প্রতি ৫শ’ টাকা করে। যার সিংহভাগ পাচ্ছেন ওই ইউনিয়ন সমাজকর্মীর দায়িত্বে কারিগরি প্রশিক্ষক ধীরেন্দ্র নাথ রায়। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টাকা নেয়ার প্রশ্নেই উঠে না। বইগুলো ইউপি মাঠেই বিতরণ করা হয়েছে।

আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে বলেন, বাড়িতে বই বিতরণের কোনো নিয়ম নেই। ওই ইউনিয়নের বিষয়ে অনেকে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি প্রশিক্ষণে ঢাকায় অবস্থান করছি। ফিরে এসে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমের কোনো অনিয়ম দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।