ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঘুম থেকে জেগেই রোজগারের চিন্তা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
ঘুম থেকে জেগেই রোজগারের চিন্তা! ভেলায় শিশ্র শ্রম। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: ভোলা শহর এবং আশেপাশের লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল, রিকশা-সাইকেলের গ্যারেজ ও পাবলিক এলাকায় দেখা যায় তাদের। অভাবের তাড়নায় টাকা রোজগারে শ্রম দেয়। তারপরও হরহামেশা বঞ্চিত হতে হয় ন্যায্য মজুরি থেকে।

খুব ভোরে উপার্জনের আশায় শ্রম বিক্রি শুরু হয় এবং তা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শহরের শ্রমজীবী ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী এসব শিশুর গল্প ঠিক এমনই।

এদের মধ্যে একজন সাহাবুদ্দিন (৯)।

ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় কথা সাহাবুদ্দিনের সাথে। সাহাবুদ্দিন জানায়, পিতা রিকশাচালক ছিলেন। কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পড়ে সাহাবুদ্দিনের উপর। আর তাই পড়ালেখার স্বপ্ন থাকলেও বাধ্য হয়ে তাকে চায়ের দোকানে পানি আনার কাজে শ্রম বিক্রি করতে হচ্ছে।

সাহাবুদ্দিন জানায়, ইচ্ছে ছিলো উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে ডাক্তার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন  তো পূরণ হলো না। এখন পানি টেনে দিন কেটে যায়। ঘুম থেকে উঠেই দিনভর পরিশ্রম, সন্ধ্যায় টাকা পেলে মুখে হাসি ফুটে তার।
সাহাবুদ্দিনের মত দারিদ্রের কারণে শ্রম দিচ্ছে অনেক শিশু। তাদের মধ্যে কেউ ঘাটের কুলি, কেউ দোকানের কর্মচারী, কেউবা হকারি পেশাসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রম বিক্রি করছে। ভোলায় এমন শিশুর দেখা মেলে সর্বত্র।

কিন্তু দিনভর হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটলেও তাদের মেলেনা ন্যায্য মজুরি। প্রতিবাদ করলেই চলে অত্যাচার। এতে একদিকে যেমন এরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা থেকেও। শিশু শ্রম বন্ধ কিংবা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষও উদাসীন। যে কারণে দিন দিন শিশু শ্রম বেড়েই চলেছে। যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, শিশু শ্রম বন্ধে তাদের কার্যক্রম চলছে।

কিন্তু ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক শিশু যাত্রীদের জন্য অপেক্ষায়। এদের মধ্যে কেউ লঞ্চে পানি বিক্রি করছে, কেউ খাবার ফেরি করছে, কেউবা কুলির কাজ করছে। কোনো যানবাহন এলেই দৌড়ে ছুটে যায় তারা। ব্যাগসহ অন্য মালামাল কাঁধে নিয়ে লঞ্চে তুলে দেয়। এভাবে  কিছু টাকা রোজগার করে। তবে মাঝে-মধ্যেই তাদের মারধরের শিকার হতে হয়।

যে বয়সে তাদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে পারিবারিক অস্বচ্ছলতা, দারিদ্র ও পিতার উদাসীনতায় তারা বাধ্য হচ্ছে শ্রম বিক্রি করতে। যে কারণে প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না।

ঘাটের শিশু শ্রমিক লোকমান, আরিফ ও বাবুল। ইচ্ছা থাকলেও অভাবের কারণে পড়ালেখা হয়নি। তাই কুলির কাজ করতে হচ্ছে।

তাদের মতে, অন্যরা যখন স্কুলে যায়, তখন আমাদেরও স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কিভাবে যাবো? আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয় না।

শিশু শ্রমিক আমিন স্থানীয় এক স্কুলের ৭ম শেণির ছাত্র। স্কুল ছুটি শেষে ঘাটে কুলির কাজ করে। আমিন জানায়, তার বারা আ: হক তাকে পড়াতে চায় না, কাজ করে খেতে বলে। কিন্তু মনোবল না হারিয়ে সে পড়ার ফাঁকে শ্রম বিক্রি করে। এতে উপার্জিত টাকায় চালাতে পারে পড়ালেখার খরচ।

অল্প বয়সে শ্রম বিক্রির কারণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নানা সমস্যা ও রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান ভোলার সিভিল সার্জন ডাক্তার রথীন্দ্র নাথ মজুমদার।

তিনি বলেন, এসব শিশু অতিরিক্ত শ্রম বিক্রি করায় বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়ে থাকে, অপুষ্টিতে ভুগে থাকে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো: সেলিম উদ্দিন বলেন, শিশু শ্রম বন্ধে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ঝরে পড়া শিশুদেরকেও স্কুলমুখী করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।