অগ্নিদগ্ধ রেখার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দিনগত গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে ফেরদৌসিকে আটক করেছে পুলিশ।
বর্তমানে সারা শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের একটি বেডে শুয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন রেখা বেগম।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়া এলাকায় রেখা বেগমের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান এক নারী। এরপর রেখাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুধু এই ফেরদৌসির নামই বলেন রেখা।
ফেরদৌসি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেখার ভাই নওশাদ আলী জানান, ফেরদৌসি তার বোন রেখার বান্ধবী। তবে গত কয়েক বছর ধরে রেখার স্বামী কামরুল ইসলামের সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছে। বিষয়টি জানতে পেরে রেখা তাদের পরকীয়া প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ফেরদৌসি তার বান্ধবী রেখার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে পাঠায়।
রেখার ভাই নওশাদ বলেন, তার বাবার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর হেতেমখাঁ এলাকায়। বিয়ের পর মহানগরীর কলাবাগান স্বামী কামরুলের সঙ্গেই থাকতেন রেখা বেগম। তার স্বামী পেশায় একজন ঠিকাদার। পরকীয়ার জের ধরে রেখার সংসারে দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তি চলছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রেখা দরগাপাড়া এলাকায় হযরত শাহ মখদুম রূপশ (রহঃ) মাজারে মাগরিবের নামাজ আদায় এবং দোয়া করতে গিয়েছিলেন।
পরে মাজার থেকে বের হয়ে তিনি পদ্মা নদীর পাড়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। সেখানেই তার শরীরে পেট্রোল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রেখা নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। অভিযুক্ত ফেরদৌসির বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে সামান্য দূরের কশাইপাড়া মহল্লায়। তার বাবার নাম আলম হোসেন।
রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আফরোজা নাজনিন জানান, আগুনে রেখার শরীরের ৮০ শতাশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় পাঠানো প্রয়োজন।
রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, রামেক হাসপাতালে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রেখার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। ফেরদৌসি তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছেন বলে রেখা বেগম জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফেরদৌসিকে আটক করেছে।
পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ফেরদৌসিকে থানায় রেখে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তিনি বান্ধবী রেখার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হবে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
রেখা-কামরুল দম্পতির রাবিব ইসলাম নামে এক ছেলে ও লাবন্য নামে এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে রাবিব স্থানীয় স্কুলে দশম শ্রেণিতে ও লাবন্য অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।
বাংলাদেশ সময়:০৩৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৭
এসএস/জেএম