ঢাকা: ডেটলাইন ১৯ আগষ্ট, বৃহস্পতিবার। দুপুর সোয়া দুইটা।
দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র এই প্রতিবেদক পথ আটকালেন ব্যক্তিটির।
‘আমি সবকিছু দেখেছি। আপনার পকেটে কী?’ জানতে চাইলে অসহায় ও অপরাধী ভাব করে জানালেন তার নাম ‘জাহিদ’।
পকেটের কাগজ বের করার পর দেখা গেল সাদা কাগজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের সিল। লেখা ‘মনিরুজ্জামান মিয়া, দাপ্তরিক কাজ। ’
আর এদিকে সুবেদারের পকেটে গুজে দেওয়া টাকা ভাগ হয়ে গেলো গেটে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের (এপিবিএন) সদস্য সুলতানের সঙ্গেও।
ডেটলাইন- ১৯ এপ্রিল, সোমবার। সময় দুপুর পৌণে দুইটা। সচিবালয়ের দুই নম্বর গেট। খুলনার খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না কর্তব্যরত এপিবিএন সদস্যরা। আওয়ামী লীগ নেতা তিনি কিছু বলছেন না, তবে তার পক্ষ হয়ে এপিবিএন সদস্যদের সঙ্গে তর্ক করছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এক সদস্য।
আগের দিন অর্থাৎ ১৮ এপ্রিলের একটি ছেঁড়া পাস দিয়ে তাকে সচিবালয়ে ঢোকানোর চেষ্টা করছেন ওই এসবির সদস্য। কিন্তু আগের দিনের পাস দিয়ে কোনোভাবেই ঢুকতে দেবে না এপিবিএন। অগত্যা গেটের ডানদিকে আম গাছের নিচে বসা কর্মকর্তার কাছে যান এসবি পুলিশের ওই সদস্য। কর্মকর্তা এক ফাঁকে চোখের ইশারায় ডাকেন ওই নেতাকে। লেনদেন চুকেবুকে গেলে এক ফাঁেক সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন নেতা। পিছু নিয়ে জানা যায় তার পরিচয়। এসবি পুলিশ কেন তার পে কথা বলছে জানতে চাইলে মুচকি হেসে বলেন, ‘সাধেই কি আর কথা বলেছে ভাই! দুই’শ টাকা। ’
ডেটলাইন- ২৮ এপ্রিল বুধবার। সময় বিকেল সাড়ে চারটা হলেও ঘটনাস্থল একই। এক পুলিশ সদস্য দুই ব্যক্তিকে পাস ছাড়াই সচিবালয়ের ভেতর নিয়ে যান। দায়িত্বরত এপিবিএনের সদস্যরা বাধা দিলে রেগে যান ওই পুলিশ সদস্য। দু’জনকেই এক প্রকার জোর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। ফিরে এসে এপিবিএন সদস্য বীরেন্দ্রকে প্রশ্ন করেন- ‘আপনি আটকালেন কেন?’ ঘাবড়ে যান বীরেন্দ্র। মিনমিন করে বলেন, ‘বিনা পাসে লোক নেবেন কেন? রাগতস্বরে পুলিশ সদস্য বলেন, ‘জানেন ওরা কারা? বলেই চোখ রাঙিয়ে এগিয়ে যান। পিছু নিয়ে দেখা যায় প্রবেশকারীদের একজন পাঁচ’শ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিলেন ওই পুলিশ সদস্যর হাতে।
ডেটলাইন- ৫ মে দুপুর পৌণে একটা। সচিবালয়ের একই গেট। সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। সমস্যা কী? জানতে চান কর্তব্যরত এপিবিএনের এক সদস্য। সমস্যা জানালে বলেন, টাকা লাগবে। পাঁচ’শ টাকা দাবি করলে তারা চার’শ টাকার বিনিময়ে রফা করে চলে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এভাবেই সচিবালয়ে প্রবেশবাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য। এদের সঙ্গে পাস বহনকারী কর্মচারীদের একটি অংশের যোগসাজশ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মচারী গেটগুলোতে ওঁৎ পেতে থাকেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা দর্শনার্থীরাই তাদের শিকার। দরদাম ঠিক হলে কোনো মন্ত্রণালয়ের পাস, বৈঠক বা সংবাদ সম্মেলনের অ্যাসাইনমেন্টের কপি কিংবা ফটোকপি যাই হোক একটা জোগাড় করে দেওয়া হয় দর্শনার্থীকে। ওসব কিছু না পাওয়া গেলে নগদ টাকাই ভরসা। এ ভাবেই চলছে সচিবালয়ে জমজমাট পাসবাণিজ্য।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৩৪০ ঘন্টা, ২২ আগস্ট,২০১০