ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাত যতই বাড়ছে চামড়ার দাম ততোই পড়ছে!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৭
রাত যতই বাড়ছে চামড়ার দাম ততোই পড়ছে! রাত যতই বাড়ছে চামড়ার দাম ততোই পড়ছে!

বগুড়া: ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১০টা ছুঁই ছুঁই। শহরের বাদুরতলা এলাকায় একজন ব্যবসায়ীর কাছে গরুর চামড়া বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলেন। বিক্রেতার নাম জামিলুর রহমান। তিনি এক লাখ ২ হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাঁড় গরু কোরবানি দেন। সেই গরুর চামড়া বিক্রি করেন মাত্র ৮০০ টাকায়।  

আরেকজনের নাম আল মাহমুদ। তিনি কোরবানি দেন ১ লাখ মূল্যের ষাঁড় গরু।

শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার ব্যবসায়ীর কাছে সেই চামড়া বিক্রি করেন মাত্র ১৪০০ টাকায়। আবু তালহা ৬৫ হাজার টাকায় ষাঁড় কিনে কোরবানি দেওয়ার পর সেই পশুর চামড়া বিক্রি করেন ১১০০ টাকায়।

তবে খাঁসির চামড়া তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস খাঁসির চামড়া রকমভেদে ৭০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সবমিলে রাত যতই গভীর হচ্ছে চামড়ার বাজার ততোই পড়ে আসছে। এবার শেষ অবধি চামড়ার বাজার কোথায় গিয়ে ঠিকবে তা সঠিক করে বলাটা ভীষণ মুশকিল।

শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১০টার দিক বগুড়ার শহরের চামড়া বাজারখ্যাত বাদুরতলা, চকসূত্রাপুর, চকযাদু রোড, থানা মোড় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে এমনই তথ্য ওঠে আসে। বরাবরের মতোই এবারো এসব স্থানে রোববার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত পুরোদমে চামড়া বেচাকেনা চলবে।  

...আব্দুল গফুর, আসাদুজ্জামান, কোরবান আলীসহ একাধিক চামড়া ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এবারো প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মৌসুমের ব্যবসায়ীরা সকাল থেকেই চামড়া কিনতে মাঠে নেমে পড়েন। তারা ছড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন শহর, পাড়া-মহল্লা ও গ্রাম-গঞ্জে।  

মূল শহরের কিছু ও শহরের বাইরে সিংহভাগ এলাকার মানুষ সমাজভিত্তিক বসবাস করেন। এ কারণে পশু কোরবানির পর চামড়া সমাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে নাম লিখিয়ে জমা দেন। সেখান থেকেই পশু ভেদে একযোগে চামড়াগুলো বিক্রি করা হয়। মোটামোটি দুপুর থেকেই চামড়া বেচাবিক্রি শুরু হয়।  

হামছায়াপুর সমাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত আল মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, তাদের সমাজে জড়ো হওয়া গরুর চামড়াগুলো গড়ে ১৬০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। খাঁসির চামড়া গড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মহিষের এক পিস চামড়া এখনো বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।

দুবলাগাড়ী চকপোতা সমাজের জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, তাদের সমাজের গরুর চামড়াগুলো গড়ে ১৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। তবে তিনটি মহিষের মাত্র ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছে মহিষের চামড়ার চাহিদা নেই বললেই চলে।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ঘড়ির কাটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চামড়ার বাজার কমে আসছে। বিগত বছরগুলোয় এমন নজির ছিলো না। সে অনুযায়ী দুপুর থেকে বিকেলে পর্যন্ত মৌসুমী ব্যবসায়ী ও মূল ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাড়তি দামে চামড়া কিনেছেন তারা। সময়ের ব্যবধানে চামড়ার বাজার কমতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত যতই বাড়তে থাকে ততোই কমতে থাকে চামড়ার বাজার।

শহরের বাদুরতলা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিক ও আড়তদারের কাছে অনেক ব্যবসায়ীর বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এবার চামড়া দিতে না পারলে বকেয়া টাকার কিছুই পাওয়া যাবে না। সে হিসেবে তিনি চামড়া কিনেছেন। তবে এবার মোটা অঙ্কের লোকসান গুণতে হবে তাকে যোগ করেন এই ব্যবসায়ী।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৭
এমবিএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।