ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

৫০ কোটি টাকার চামড়া কেনার টার্গেট বগুড়ায়!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৭
৫০ কোটি টাকার চামড়া কেনার টার্গেট বগুড়ায়! বগুড়ায় ৫০ কোটি টাকার চামড়া সংগ্রহের টার্গেট- ছবি- আরিফ জাহান

বগুড়া: চামড়াখাতে পরপর গত দুই বছর কোনো পরিবর্তন আসেনি বগুড়ায়। ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে ‘জিম্মি’ এখানকার ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছরের কোটি কোটি বকেয়া টাকার কোনো খোঁজ নেই। ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে আটকা রয়েছে এসব টাকা। এখনো বকেয়া টাকা পাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা মেলেনি।

অথচ রাত পোহালেই ঈদ-উল আযহা। সাধ্যানুযায়ী যে যার মতো কোরবানির পশু কেনার কাজ শেষ করে এনেছেন প্রায়।

এরইমধ্যে বেড়ে চলছে লবণের দাম। শ্রমিক মজুরি বেড়েছে দ্বিগুণের মতো। এদিকে চামড়ার দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এর উপর নেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা। যেন এ সুযোগটিই নেন ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা।

এতো সব হতাশা মাথায় নিয়ে বরাবরের মতো এবারও চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। পুঁজি বিনিয়োগে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টায় মাঠে নেমেছেন তারা। সবমিলে এবার টার্গেট প্রায় ৫০ কোটি টাকার চামড়া কেনার।

বগুড়ায় চামড়া ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য জানা যায়।  
  
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেলো দুই মাস আগে বগুড়ার বাজারে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৮৫-৯০ টাকা দরে বেচাবিক্রি হয়েছে। একইভাবে খাসির চামড়া ২০-২৫ টাকা ও বকরির চামড়া ১০-১২ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি বর্গফুট ভলোমানের গরুর চামড়া ৭০-৭৫ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ঢাকার ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের কারসাজির কারণে এমনটা হচ্ছে। প্রত্যেক বছর কোরবানি ঈদের আগে ঢাকার ব্যবসায়ীরা চামড়ার বাজার নিন্মমুখী করতে অত্যন্ত কৌশলে এ কাজটি করেন।  

চামড়া ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকায় গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০-৫৫ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।  

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতিবস্তা (৭৪ কেজি) লবণ ১৪০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত ৩ মাস আগেও প্রতিবস্তা লবণ ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।   

এদিকে শ্রমিকদের মজুরিও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কেনা থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত গরুর চামড়া প্রতি গড়ে ২০০ টাকা বাড়তি ব্যয় হতো। সেই খরচ এবার দ্বিগুণ হবে। সঙ্গে রয়েছে পরিবহন ব্যয় ও ব্যাংক ঋণের সুদ। এ হিসেব অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট চামড়ার বিপরীতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে যায়।  

আর লবণ দিয়ে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় চামড়া সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে চামড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। এতে ঈদের দিন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও লোকসানের মুখে পড়েন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।  
  
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ঈদের আগেই সিংহভাগ ব্যবসায়ী চামড়া কিনতে ঋণ নেন। নতুন আশায় ট্যানারি মালিক ও আড়াতদারদের কাছে চামড়া বিক্রি করেন। কিন্তু ঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করেন না তারা। এতে মহাবিপাকে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।   

তিনি আরো জানান, প্রয়োজনীয় পুঁজি এ ব্যবসার প্রধান সমস্যা। ঈদের আগে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে পড়ে থাকা বকেয়া টাকার পুরোটা না পাওয়া গেলে অনেক ব্যবসায়ী চাহিদামতো চামড়া কিনতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শোকরানা বাংলানিউজকে জানান, এ জেলার ব্যবসায়ীরা ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে অনেকটা জিম্মি। এ অঞ্চলে কোনো ট্যানারি না থাকায় নিরুপায় হয়ে কোটি কোটি টাকার চামড়া বাকিতে বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা।  

সময়মতো সেই বকেয়া টাকা পাওয়া যায় না। ফলে লাভের টাকা ব্যাংক ঋণের সুদ ও দাদনের টাকা দিতেই শেষ। অবশেষে ব্যবসায়ীদের কপালে থাকে লোকসান। তবুও লাভের আশায় এবারও চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৭
এমবিএইচ/ জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।