ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শিক্ষক আন্দোলন: শতাধিক বেসরকারি কলেজে অচলাবস্থার শঙ্কা

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১০
শিক্ষক আন্দোলন: শতাধিক বেসরকারি কলেজে অচলাবস্থার শঙ্কা

ঢাকা: আট দফা দাবিতে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে ১৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চলতি বছরের শুরু থেকে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে  চেষ্টা-তদ্বিরের পাশিপাশি বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

  এসব দাবির মধ্যে আছে:বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা, যাদের শিক্ষকতার বয়স ১৫ বছরের বেশি তাদের অধ্যক্ষ এবং যাদের ১২ বছরের বেশি তাদের উপাধ্যক্ষ নিয়োগ, উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কোর্সের শূন্য পদে সরাসরি নিয়োগ এবং যেসব শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ দুই বছর হয়েছে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ ।

জানা গেছে, বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ এবং দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক শিক্ষকই ঠিকমত কলেজে যাচ্ছেন না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পাঠ্যক্রম। সেই সঙ্গে চলছে লাগাতার কাসবর্জন। শিক্ষকরা আত্মাহুতিরও হুমকি দিয়েছেন।

শিক্ষকরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে পাঠদান কার্যক্রমে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলেও কেউই ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়নি।

তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকদের ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমাকে কেউ জানায়নি। আমাকে জানালে বুঝতে পারবো তারা কী চায়। তখনই এ ব্যাপারে কী করা যায় তা বলতে পারবো। ’

শিক্ষকদের কেউ দেখা করছে কিনা তা মনে নেই বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

এদিকে এরই মধ্যে দাবি আদায়ের জন্য সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ছয় হাজার শিক্ষক আমরণ অনশন কর্মসূচি এবং আত্মাহুতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

তারা জানিয়েছেন, দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী ২৭ ও ২৮ অক্টোবর ক্লাস বর্জন এবং পরবর্তীতে লাগাতার কাস বর্জন কর্মসূচি পালন করা হবে। এতেও সরকার দাবি না মানলে ২৭ ডিসেম্বর আমরণ অনশনের মাধ্যমে আত্মাহুতি কর্মসূচি পালন করা হবে।

বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক কাজী মো: ফারুক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক নয়। আমরা তার সঙ্গে দুই মাস আগে দেখা করেছি। আমাদের দাবির কথা বলেছি। তিনি আশ্বাসও দিয়েছিলেন। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও চেষ্টা করছি সরকারকে বোঝাতে। এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দুই দফা, শিক্ষা সচিবের সঙ্গে তিন দফা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সঙ্গে তিন দফা দেখা করেছি। তারা সবাই দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। ’

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও সচিব পর্যায়ে তা স্থগিত হয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন কাজী ফারুক।   এজন্য শিক্ষা সচিবকে দায়ী করেন তিনি।

কাজী ফারুক আরও জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে অটল থাকবেন তারা। দেশের ১৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।

হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. রিপন মোল্লা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলন চলতে থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ছাত্ররা। আমি আশা করি, সরকার সবকিছু বিবেচনা করে সমাধানের পথ বের করবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের সম্মানী খুবই সামান্য। তারা যদি পরিশ্রম করে পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক না পায় তাহলে শিক্ষাদানে মন বসবে না। ’

সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক কাজী কামরুজ্জান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ’

তিনি আরও বলেন ‘আমরা আন্দোলন করতে চাইনা। সরকারকে দাবি দাওয়ার কথা জানিয়েছি। মেনে নিলে আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না। ’

রাজবাড়ি সরকারি পাংশা কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক মনিরুল আলম  বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আশা করি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আমাদের দাবি মেনে নেবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না আমরণ কর্মসূচি পালন করতে। এই কর্মসূচি পালন করলে সরকারও বিব্রত হবে। ক্ষতি হবে পড়াশুনার।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad