সাভার: টানা সহিংসতা ভাংচুর ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে আজ রোববার সকাল থেকেই থমথমে অবস্থা চলছে। সম্ভাব্য সহিংসতার আশংকায় শিল্পাঞ্চল জুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য।
এদিকে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের মুখে আজ ওশিন গেট স্যুয়েটার নামে আরো একটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুত এলাকার এই কারখানার শ্রমিকরা আজ রোববার বেতন বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে কারখানায় অবস্থান নিলে অনির্দিষ্টকালের জন্যে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সেখানে উত্তেজনা চলছে ।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘পুলিশকে না জানিয়েই কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এভাবে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করলে সহিংসতার আশঙ্কা বেশি থাকে। ’
এদিকে, জামগড়ায় বিজিএমইএ’র সভাপতি সালাম মুর্শেদীর মালিকানাধীন এনভয় গ্র“পে সাময়িক বিরতির পর নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠছে শ্রমিক অসন্তোষ।
রাশেদুল নামের গ্রেফতার হওয়া এক শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে এনভয় ফ্যাশন, এনভয় ডিজাইন ও মানতো অ্যাপারেলস-এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাত হাজার শ্রমিক সকাল থেকেই কাজ বন্ধ রেখে অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন ফোরে। ওই শ্রমিককে মুক্তি দেওয়া না হলে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলে নতুন করে শুরু হয় উত্তেজনা।
নূন্যতম মজুরি ৫ হাজার টাকার দাবিতে গত ১১ জুন কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামেন এনভয় গ্র“পের প্রায় সাত হাজার শ্রমিক। পরদিন কর্তৃপক্ষ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে চলতে থাকে টানা ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা। সংঘর্ষে আশুলিয়া থানার ওসিসহ আহত হন অর্ধশতাধিক।
ভাংচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১২ জুন আটক করা হয় এনভয় গ্র“পের শ্রমিক রাশেদুলকে।
গত ১৮ জুন এনভয় গ্র“প খুলে দেয়া হলেও শনিবারের সহিংস ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে।
আজ রোববার কারখানায় গিয়ে ওই শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেন তারা।
কারখানার ব্যবস্থাপক মঞ্জুর মোর্শেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমরা আলোচনা মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি’।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক কাজ বন্ধ রেখে শ্রমিকদের অবস্থান গ্রহণের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া ওই শ্রমিক আদালতের মাধ্যমে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। এই মূহুর্তেই তার মুক্তি চাইলেই তা মানা সম্ভব নয়। ’
তিনি বলেন,‘ গন্ডগোল না করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আমরাশ্রমিকদের অনুরোধ জানিয়েছি, ওই শ্রমিককে প্রয়োজনে পুলিশ রিপোর্টের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত করে আনারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে তারা এই মূহুর্তে তার মুক্তির দাবি করছে। তাদের বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে। ’
সকাল থেকেই এনভয় গ্র“পের সামনে অবস্থান নিয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএ’র সভাপতি সালাম মুর্শেদী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘এভাবে আর চলে না। মনে হয় ফ্যাক্টরিই বন্ধ করে দিতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘ওই শ্রমিকের বিরুদ্ধে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা করেনি। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় রাস্তা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর ওই শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে শ্রমিদের এ অবস্থান কর্মসূচি ও কাজ বন্ধ রাখা মোটেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। ’
এদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষিত নাশা গ্র“প আজ রোববার খুলে দেওয়া হলেও নাসা এজি সুপার কারখানায় আংশিক কাজ শুরু হয়েছে। তবে নাসা গার্ডেন, নাসা গ্লোবাল, নাসা হাইটেক ও নাসা ওয়াশ নামের অপর চারটি কারখানায় আজ কাজে যোগ দেননি শ্রমিকরা।
নাসা এজি সুপার গামের্ন্টস লিমিটেডের পরিচালক মোসাদ্দেক আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি। ’
শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ থমথমে হলেও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১১৪৬ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১০
জেডআর/এমএমকে/জেএম