খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব হজযাত্রীদের প্রায় সবাই মধ্যস্বত্বভোগী দালালের প্রতারণার শিকার। চলতি বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন হজ প্যাকেজ মূল্য ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
দালালদের ফাঁদে পড়ে সহজ সরল মানুষেরা একটু কম খরচে হজে যাওয়ার আশায় পরিবারের দুই, তিন জনের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে যানা গেছে প্রতারণার শিকার এসব হজযাত্রীদের অধিকাংশই গ্রামের মানুষ।
সোমবার (২৮ আগস্ট) হজক্যাম্পে বাংলানিউজের সাথে কথা হয় গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থেকে আগত ৭৮ বছর বয়সী খাইরুজ্জামানের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, তার কাছ থেকে আল সাফা ইয়ার ট্রাভেলস এর একজন ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিনি হজ ক্যাম্পে এসেছেন ২২ আগস্ট। গতকাল তাকে হোটেল থেকে এহরাম বেঁধে সরাসরি বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশ্ন করলে তিনি জানান তার কোনো ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়নি।
পরে সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন ওই দালাল। তবে খাইরুজ্জামানের এখনও কোনো টিকিট হয়নি। এখন এজেন্সির কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
শুধু খাইরুজ্জামানই নন দালালদের ফাঁদ থেকে বের হতে পারেননি শিক্ষিত অনকে ব্যক্তিও। কথা হয় ফরিদপুরের নগরকান্দা থেকে আগত আল বালাদ হজ এজেন্সির যাত্রী আবু সালেক মৃধার (৫৫) সঙ্গে।
তিনি বলেন, আমি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আমার স্ত্রী এবং আমার জন্য এজেন্সিকে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমার ভিসা-পাসপোর্ট হলেও স্ত্রীর কিছুই হয়নি। তারা বলেছে, এ বছর আপনার স্ত্রী যেতে পারবে না। হিসেব করে তার টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে। এখন আমাকেও টিকিট দেয়নি। এদিকে সরকারিভাবে আমার ছুটি হয়ে গেছে। এ বছর হজে যেতে না পারলে আমি চাকরির ১৩ বছরের মধ্যে আর হজে যাওয়ার ছুটি নিতে পারবো না।
টাকা কাকে দিয়েছেন প্রশ্ন করলে তিনি পকেট থেকে একটি ভিজিটিং কার্ড দেখিয়ে বলেন জামাল উদ্দিন কোয়েল নামে এক ব্যক্তির কাছে দিয়েছি।
কার্ডে দেখা যায় আলহাজ জামাল উদ্দিন কোয়েল নামে ওই ব্যক্তির পরিচয় রয়েছে আল-বালাদ ওভারসিস ও সুলতানা এয়ার ট্রাভেলসের ম্যানেজিং পার্টনার হিসেবে। পরে কার্ড থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে ওই ব্যক্তিকে কল করা হলে ৩টি নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।
একইভাবে নাটোর থেকে আগত ফেরদাউসি বেগম (৬৫) জানান, তারা হজে যেতে ২ জনের জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছেন কুমিল্লার এক ব্যক্তিকে। তার সাথে কোনো দিন দেখা হয়নি। পরে আরও ১ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাচ্ছেন।
প্রতারণা বন্ধে এখন দাবি উঠেছে হজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার। রেজিস্ট্রেশনসহ সকল ক্ষেত্রে অনলাইন সেবার মাধ্যমে সচ্ছতা নিশ্চিত করা ছাড়া দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে হজ অফিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু দালালদের কোথায় পাবো? তবে কেউ যদি কোনো দালালের নামে মামলা করেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন বলেন, আমরা হজ ব্যবস্থাকে সামনের বছর থেকে ঢেলে সাজাবো। যাতে যাত্রীরা প্রতারণার শিকার না হয়।
আরও পড়ুন..
হজযাত্রা’র সমাপ্তি সোমবার, যেতে বাকি ৩৭৫ যাত্রী
রাতের ফ্লাইটে হজে যাবেন ৮১ টিকিট বঞ্চিত যাত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
এসআইজে/এমজেএফ