ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চরম বিশৃঙ্খলা রেলে, টিকিট নিয়ে নয়-ছয়

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭
চরম বিশৃঙ্খলা রেলে, টিকিট নিয়ে নয়-ছয় ভিআিইপি টিকিট লিস্টের একাংশ

ঢাকা: রেলের ঈদ পরিকল্পনার শুরুতেই লেগেছিলো গণ্ডগোল। যার জের টানলো টিকিট বিক্রির শেষ দিন পর্যন্ত। ১ সেপ্টেম্বর ঈদ ভেবে অগ্রিম টিকিট ছাড়ে রেলওয়ে। কিন্তু পরে ১ সেপ্টেম্বর ট্রেন চলবে কিনা এ সিদ্ধান্ত যাত্রীদের জানানো হয়নি। শেষে ঘোষণা ছাড়াই কাউন্টারে চলে এদিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি।

আর ঈদ যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টিকিটের ‘নয়-ছয়’ রীতিমতো আলোচিত বিষয়। টিকিট প্রত্যাশীরা বলছেন, এবার ঈদ টিকিট নিয়ে কালোবাজারি নয়, কেলেঙ্কারি হয়েছে।

যার মূলে রেল মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তারা। ভিআইপিদের জন্য রেলে ৫ শতাংশ টিকিট বরাদ্দ থাকলেও এ কোটায় চলে গেছে সিংহভাগ টিকিট।
 
যাত্রীদের অভিযোগ, রাতভর অপেক্ষা শেষে লাইনে একেবারে প্রথমে থেকেও যখন কাউন্টার থেকে বলা হয় এসি টিকিট শেষ, তখন বোঝাই যায় বিক্রির আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে বেশকিছু টিকিট।
 
যে ৫ দিনের আগাম টিকিট এবার রেল দিয়েছে তার সবদিনই ছিলো এই অভিযোগ। পরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, রেলের টিকিট ‘ভিআইপি’ নামে কেটে নিয়েছেন খোদ রেলমন্ত্রী, মন্ত্রীর ড্রাইভার, পিএস, এপিএস, নাতি, পিএ পরিচয়ে। এমন পরিচয়ের রেফারেন্সে শুধু ৩১ আগস্টের টিকিট কাটা হয়েছে শতাধিক। যার সব টিকিটই ছিলো কেবিন ও প্রথম শ্রেণীর।
 
সাধারণ কোনো যাত্রী কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে এরকম আসন পাননি। ‘ভিআইপি’ নামের এ টিকিটগুলো আবার দেওয়া হয়েছে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত।
 
বাংলানিউজের কাছে ভিআইপি টিকিটের চাহিদাপত্র ও টিকিট দেওয়ার যে নথিপত্র এসেছে তাতে দেখা যায়, রেলমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের লোকজনের নামে টিকিট বরাদ্দের তথ্য। এসব টিকিটের যাত্রী তারা নিজেরা নন, তাদের আত্মীয়-পরিজন। এমনকি তাদের নাম দিয়ে সুবিধাভোগী সরকারি চাকরিজীবী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বাড়ি ফিরছেন। অথচ বঞ্চিত রাত জেগে লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীরা।
 
মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নামেও বেশকিছু টিকিট গেছে কমলাপুর থেকে। এগুলো ভিআইপি টিকিট তালিকায় দেখা যায়।
 
এছাড়া টিকিটের চাপ ছিলো- বিচারপতি, এমপি, পুলিশ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব উপসচিবের নামে। এর বাইরে মোটা দাগে টিকিট কেটে নিয়েছেন রেলওয়ে শ্রমিকলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আর রেলের কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই বহু টিকিট কেটে নিয়ে নিজের মধ্যে ভাগাভাগি করেছেন।

বাংলানিউজের হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, রেলস্টেশনের টিকিট বরাদ্দপত্রের যে তালিকা, তার প্রায় অর্ধেকের বেশি রেলভবন সংশ্লিষ্ট।
এসব কাগজ-নথি বাংলানিউজের হাতে রয়েছে। ছবিতে তার একাংশ দেওয়া হলো।
 
শুধু এই টিকিট কেলেঙ্কারি নয়, অনেকের টিকিট চাহিদাপত্র গ্রহণ করেও পরে টিকিট দেওয়া হয়নি। এই টিকিটগুলো আবার রেল মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনরা কেটে নিয়েছেন। রেলের ডিসিও এবং ডিটিও টিকিটগুলো বাতিল করে বিশেষজনদের দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলস্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, সম্পদ সীমিত। সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়। আর ভিআইপি কোটা ৫ শতাংশ। এর বাইরে বাকিগুলো কাউন্টারে বিক্রি হয়েছে।
 
এছাড়া যাত্রীদের ট্রেন যাত্রা বাতিল হওয়ার পর তার টাকা ফেরত দিতেও বিশৃঙ্খলা হয়েছে রেলে। ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইল রেলসেতুর মাটি সরে যাওয়ার পর দু’দিন বন্ধ ছিলো মৈত্রীসহ উত্তারাঞ্চলের ট্রেন। অনেক যাত্রী এখনও তাদের বাতিল হওয়া মৈত্রী ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত পাননি। আবার যারা ফেরত নিতে এসেছিলেন তাদের দিনভর কমলাপুরে অপেক্ষায় রেখে শেষে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে রেলস্টেশনে সংবাদকর্মীদের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কলকাতাগামী যাত্রীরা।
 
সারা বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েও ঈদে রেলযাত্রার শুরুতেই এমন অভিযোগের পাহাড় রেলওয়ে ঘিরে। প্রতিবার ঈদ টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন রেলমন্ত্রী। এবার রেলস্টেশনের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বাসায় অবস্থান করলেও স্টেশনে আসেননি মন্ত্রী মুজিবুল হক।
   
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৭
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।