একই বিষয়ে ক’দিন আগে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কঠোর অবস্থা দেখায় পুলিশও।
কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই মেয়রের সব তর্জন গর্জনই সার! সিসিক থেকে ইজারা দেওয়া হচ্ছে পশুর হাট।
ইজারা ছাড়া খোদ মেয়রই হজে যাওয়ার আগের দিন নগরীর শাহী ঈদগাহ লাল টিলায় উদ্বোধন করে গেছেন একটি পশুর হাট। সেই সঙ্গে সিসিক থেকে নগরীর চালিবন্দর ও সোবহানীঘাট খালি জায়গায় পশুর হাট বসাতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
সাধারণত প্রতি ঈদুল আজহার আগে ক্ষমতাসীনসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা সর্বদলীয় সিন্ডিকেট করে নগরীর যত্রতত্র পশুর হাট বসান। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ দু’টি হাট ছাড়াও নগরীতে অন্তত অর্ধশত পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। সম্ভাব্য হাট বসছে নগরীর রিকাবিবাজার, বাবনা পয়েন্ট, উপশহর, বাগবাড়ি, আখালিয়া, মদিনা মার্কেট, মিরাবাজার, কুমারপাড়া, টিলাগড়, মেন্দিবাগ (গ্যাস অফিস সংলগ্ন), ঘাসিটুলা (বেতবাজার), নগরীর উপকন্ঠে মালনীছড়া ও শাহীঈদগাহ খেলার মাঠ, কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, ঝালোপাড়া, বাবনা পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকার ফাঁকা স্থানে। এরই মধ্যে অনেক জায়গায় খুঁটিও বসানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব হাটের মালিকানায় থাকছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ এলাকার আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠন ও বিএনপি-ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতারা। এছাড়া নগরীর কাজিরবাজার পশুরহাটে সিটি করপোরেশনের ভূমি থাকলেও মামলার কারণে ঐতিহ্যবাহী এই হাটটি এবারও মালিকানায় পরিচালিত হবে।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ২২ আগস্ট সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কার্যালয়ে হয়ে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির এক নেতা বিভিন্ন স্থানে হাট বসাতে বাধা না দেওয়া সম্পর্কে বলেন, ঈদুল আজহা আসলে ছেলেরা পাঁচশ’, হাজার টাকার আশায় হাট বসায়। এই সুবিধা দেওয়ার কারণে ছিনতাইও কমে আসে!
তবে এ কারণে প্রকৃত ইজারাদারগণ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে মত দেন অন্যরা। বৈঠক সূত্র এমনটি নিশ্চিত করে জানায়, ওই বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের আরেক শীর্ষ নেতা বলেন, দলের ছেলেরা রাস্তা ছাড়া কোনো স্থানে হাট বসাতে চাইলে পুলিশ যেন একটু খেয়াল রাখে।
সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে যে সব বিষয় উঠে এসেছে, তাতে পরিষ্কার যে, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হচ্ছে পশুর হাট বসাতে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে খোলা জায়গায় হাট বসানো যাবেও বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে নগরীজুড়ে অবাধে হাট বসলে সমস্যায় পড়বেন ইজারাদাররা। নগরী সংলগ্ন লাক্কাতুড়া পশুর হাট প্রায় ৩৩ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া রুবেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রিমাদ আহমদ রুমেল বলেন, পথে ঘাটে হাট বসলে আমরা বৈধ ইজারাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। গত কোরবানির ঈদের পুনরাবৃত্তি যেন এবার না হয়, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে তুলে ধরেছেন তিনি। অবশ্য জবাবে পুলিশ কমিশনার তাকে আশ্বস্থ করেছেন বিগত দিন যে রকম চলেছে, এবার তা হবে না।
এদিকে, সদর উপজেলা থেকেও তিনটি পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ।
তিনি দাবি করেন, লাক্কাতুড়া, শাহপরান ও পীরের বাজারের ইজারা দেওয়া এ তিনটি হাট ছাড়া অন্য কোনো হাট বসলে সেটা অবৈধভাবে বসানো হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবার শাহী ঈদগাহ সংলগ্ন খেলার মাঠে হাট ইজারা দেয়া হলেও এবার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আরেকটি হাট বসিয়েছেন। ওই হাটটি তিনি নিজে উদ্বোধন করে গেছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বাংলানিউজকে বলেন, সিসিক থেকে কোনো হাট ইজারা দেওয়ার কথা ছিল না। তবে দু’টি হাটের টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যকোনো হাট বসলে তা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। তবে মেয়র কর্তৃক পশুর হাট উদ্বোধনের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
এনইউ/আরআই