ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হজ এজেন্সির কাছে জিম্মি ৪০৩ যাত্রী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭
হজ এজেন্সির কাছে জিম্মি ৪০৩ যাত্রী হজ ক্যাম্পে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন যাত্রীরা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মো. রফিক উদ্দিন সরদার (৭৬)। আড়াই লাখ টাকা দিয়ে এবার হজে যাচ্ছেন। কিন্তু গত তিনদিন ধরে হজ ক্যাম্পে এসে থাকলেও আকবর হজ এজেন্সি এখনও তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছে হতাশার ছাপ। হজ এজেন্সিকে টাকা দেওয়ার পর এখনও পাসপোর্ট ও টিকিট তিনি হাতে পাননি।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) হজ ক্যাম্পে বাংলানিউজের কাছে হতাশার কথা বলছিলেন রফিক।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, তিন মাস আগে আকবর হজ এজেন্সিকে আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন।

আজ হচ্ছে, কাল হচ্ছে করে এখনও হাতে ভিসা,পাসপোর্ট ও টিকিট পাননি। তিনদিন হলো এজেন্সির লোকজন তাকে হজ ক্যাম্পে নিয়ে এসেছে। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না। মুয়াল্লিম বদিউজ্জামানেরও এখন আর কোনো খোঁজ নেই। এছাড়া আকবর হজ এজেন্সির আরও ১১৬ জন হজ যাত্রী আছেন যাদের সঙ্গেও এজেন্সির কোনো যোগাযোগ নেই।

টাকা দিয়েও কেন হজযাত্রীরা যেতে পারছেন না জানতে চাইলে আকবর হজ এজেন্সির চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, হজযাত্রীদের কাছে আরও টাকা পাই। তারা টাকা দিয়েছেন দালালের কাছে, এজেন্সির কাছে নয়। দালাল তাদের সে টাকা আর দেয়নি। এজেন্সি যদি টাকা না পাই তাহলে কেন তারা হজযাত্রীদের নিয়ে যাবেন।

ইকো এভিয়েশন হজ এজেন্সিকে হজে যাওয়ার জন্য ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন বগুড়া জেলার মো. আবদুল আজিজ (৬২)। হজ ক্যাম্পে এসেছেন ২২ আগস্ট। কিন্তু এখনও পাসপোর্ট ও টিকিট হাতে পাননি। এরপরেও আবার হজ ক্যাম্পে নিজের টাকা দিয়ে খেতে হচ্ছে। ‌এছাড়া সঙ্গে যে মুয়াল্লিম ছিলেন তার মোবাইলও এখন বন্ধ। এখন কি করবেন বুঝতে পারছেন না। শেষ সম্বল যা ছিলো সবই বিক্রি করে এবার হজে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও জানেন না তিনি হজে যেতে পারবেন কিনা। ইকো এভিয়েমন হজ এজেন্সির আরও ১৯২ জন হজযাত্রী রয়েছেন যাদের সঙ্গে হজ এজেন্সির কোনো যোগাযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে ইকো এভিয়েশন হজ এজেন্সির মালিক রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।  

হজ ক্যাম্পে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন যাত্রীরা-ছবি-বাংলানিউজবাগেরহাটের রফিকুল ইসলাম (৫৪)  মদিনা হজ এজেন্সি থেকে হজে যাওয়ার জন্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছেন। মদিনা এজেন্সির লোকজন ২৪ তারিখ ফ্লাইট বলে ২৩ তারিখ সকালে হজ ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে আর কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। হজ ক্যাম্পে থাকবেন না চলে যাবেন তাও বুঝতে পারছেন না। যে স্বপ্ন নিয়ে হজ ক্যাম্পে এসেছিলেন সেই স্বপ্ন এবার এখানেই শেষ হচ্ছে বলে কেঁদে ফেলেন তিনি।

হজ ক্যাম্পে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই এজেন্সির আরও ৯২ হজযাত্রী রয়েছেন। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না এজেন্সি। এমনকি এজেন্সির কারো নম্বরও নেই তাদের কাছে। ফলে মুয়াল্লিম পালিয়ে যাওয়ার কারণে হজযাত্রীরা এখন বিপদে পড়েছেন।

হিসাবমতে, এই তিন এজেন্সির কাছে ৪০৩ জন হজযাত্রী জিম্মি হয়ে আছে। হজ ক্যাম্পে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছেন।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‌হজযাত্রীরা দালালের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছেন। যার কারণে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। হাবের পক্ষ থেকে কোনো কিছু করার নেই। এখন সবই মন্ত্রণালয় করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫,২০১৭
এসজে/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।