বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যার আগে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কান্দাপাড়া হাটে নিজের গরুটি বিক্রি করতে না পেরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় হতাশা নিয়েই কথাগুলো বললেন শিয়ালকোল এলাকার যুবক মিন্টু।
মিন্টু বাংলানিউজকে জানান, হাটে তার গরুর সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৪২ হাজার টাকা।
গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন শহরের মাছুমপুর মহল্লার আব্দুল আলীমও। তার দাবি, ৫ মাস আগে ৬৬ হাজার টাকায় গরু কিনে এখন ৬৫ হাজার টাকার বেশি দাম ওঠেনি। তাই বাধ্য হয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
টানতে টানতে গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন শিবনাথপুর গ্রামের আব্দুল হাই ও শওকত আলী, উত্তর সারটিয়ার শাহীন আলম, বাগবাটি গ্রামের বাবলু মল্লিক, চর হরিপুরের সুমন রেজা, কালিয়ার আকিজ আলী এবং কাজিপুর উপজেলার সিংড়াবাড়ি গ্রামের ছোলেমানসহ শত শত খামারি।
প্রখর রোদে হাটের মধ্যে দিনভর গরু নিয়ে দাড়িয়ে থেকেও বিক্রি করতে না পারা এসব মানুষের চোখে-মুখে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশার ছাপ।
খামারিরা জানান, খড়ের দাম ১০ টাকা আঁটি, গমের ভূষি ১ হাজার ৩০০ টাকা বস্তা, ৪০ টাকা কেজি চালের কুঁড়ো, খৈল ৪৪ টাকা কেজি। মাসের পর মাস গরুগুলোর পেছনে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে এখন মূলধনও ফিরে আসছে না তাদের।
এখন বাজারে যে দাম উঠেছে, তাতে বিক্রি করলে প্রতিটি গরুতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হবে খামারিদের। ফলে অধিকাংশ গরুই ফিরে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ক্রেতা জাকারিয়া হোসেন জানান, গরুর দাম অনেকটাই কম। বাজেটের তুলনায় অনেক ভালো গরু কিনতে পেরেছেন বলে জানান বেলকুচি উপজেলার চালা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও রায়গঞ্জের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের আব্দুল মালেকও।
সিরাজগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ গরুর হাট কান্দাপাড়া। এখানে সবচেয়ে বেশি গরু কেনা-বেচা হয়ে থাকে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়ও থাকে এ হাটে। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদের ৭ দিন আগেও আশানুরুপ গরু বিকি-কিনি হয়নি।
খামারিরা আরও জানান, গরুর আমদানি প্রচুর হলেও পাইকারি-খুচরা ক্রেতাদের সংখ্যা কম। ফলে বেশিরভাগ গরুই ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন তারা।
কান্দাপাড়া হাটের ইজারাদার গাজী আক্তার হোসেন মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের হাট হিসেবে গরু বিক্রি এখন পর্যন্ত অর্ধেকও হয়নি। হাটে প্রচুর গরুর আমদানি হলেও ক্রেতা একেবারেই কম।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, এ বছর জেলায় এক লাখ ৬৬ হাজার গরু তৈরি হয়েছে। এর বিপরীতে কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ। বাকি গরুগুলো ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি করা হয়। ঈদের আরও এক সপ্তাহ দেরি। আশা করা যাচ্ছে, খামারিদের গরুগুলো যথাসময়েই বিক্রি করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭
এএসআর