হামলার প্রধান টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।
সোমবার (২১ আগস্ট) সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা দিবস। ২০০৪ সালের ওই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা এবং তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ।
ওই দিন বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশে খোলা ট্রাকের উপর স্থাপিত উন্মুক্ত মঞ্চে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট, বক্তব্য শেষ করে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই অতর্কিত গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন ও এর আশপাশের এলাকা।
চারদিক থেকে সভাস্থলে গ্রেনেড এসে পড়তে থাকে। মহূর্তের মধ্যে পুরো সমাবেশ রক্তাক্ত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় মৃত্যুর জনপদে। শত শত মানুষের আর্তচিত্কার, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন দেহ, রক্ত আর বারুদের পোড়া গন্ধে বীভত্স পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় গোটা এলাকা জুড়ে।
এ সময় সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ আহতদের সাহায্য করার পরিবর্তে ভীত-সন্ত্রস্ত এবং আহত মানুষের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের আঘাতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (দলের তত্কালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে রক্ষা পাননি।
গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে শেখ হাসিনার কানের শ্রবণশক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন তাকে শ্রবণজনিত সমস্যায় ভুগতে হয়।
গ্রেনেড বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে ট্রাকের উপর মানববর্ম রচনা করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। হত্যাযজ্ঞ থেকে দলের নেত্রীকে বাঁচাতে মরিয়া নেতাকর্মীরা মানবর্ম দিয়ে আড়াল করে তাকে দ্রুত গাড়িতে তুলে দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে বের হওয়ার পথেই শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতেও ঘাতকরা অবিরাম গুলিবর্ষণ করে। গ্রেনেড হামলায় ২৩ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় আইভি রহমান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ২৪ আগস্ট শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
২১ আগস্টের এই গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হন, তারা হলেন মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, রফিকুল ইসলাম আদা চাচা, সুফিয়া বেগম, হাসিনা মমতাজ রীনা, লিটন মুন্সী ওরফে লিটু, রতন সিকদার, মো. হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মামুন মৃধা, বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আতিক সরকার, নাসিরউদ্দিন সরদার, রেজিয়া বেগম, আবুল কাসেম, জাহেদ আলী, মমিন আলী, শামসুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, ইছহাক মিয়া এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুজন।
আহতের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (দলের তত্কালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) জিল্লুর রহমান, তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘদিন চিকিত্সা নিয়ে অনেকে সুস্থ হয়েছেন। তবে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
এসকে/এমজেএফ